
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দুই দফা দাবিতে কয়েক মাস ধরেই দফায় দফায় কর্মবিরতিসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগস্টের শেষ দিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে তারা।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সমিতির ২৪ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত, ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা।
আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে একে একে ৬১টি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই এলাকার লাখ লাখ গ্রাহক। বিভিন্ন শিল্প এলাকায় কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অনেক কারখানার মালিক বাড়তি অর্থ ব্যয় করে জেনারেটরের মাধ্যমে তাদের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন।
সমিতির কর্মকর্তারা জানান, দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকের একটা বড় অংশে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৬১টি সমিতিতে কমপ্লিট শাটডাউনে প্রায় দুই কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের অনুরোধে সন্ধ্যার দিকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেছেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, ‘পল্লীবিদ্যুতের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে (রবিবার) আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। ইতিমধ্যে তাদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, বাকিগুলোর বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো দাবি জানানোর জন্য সরকারের দরজা সব সময় খোলা রয়েছে। আমরা যেটা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সেটা মাঠে না গড়ানোই ভালো।’
এ দিকে বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক প্রকৌশলী দীপক কুমার সিংহ (ডিজিএম), প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস (এজিএম), প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ভূঁইয়াকে (ডিজিএম) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আটক করার খবর পাওয়া গেছে।
আন্দোলনকারীদের একজন জানান, প্রথমে ২০ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে সন্ধ্যায় আন্দোলন স্থগিত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার পরও আরও চার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে আরইবি কর্তৃপক্ষ। তবে চাকরিচ্যুত করার আগে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। দাবি আদায়ে আন্দোলন করায় তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হাকিম (এজিএম) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমাদের দাবির বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছেন, মামলা প্রত্যাহার এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়াসহ কোনো ধরনের হয়রানি না করার আশ্বাস দেওয়ায় আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি।’
সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পল্লীবিদ্যুতের আন্দোলনকারী কর্মীদের কাছে বলা হয়, চলতি বছরের শুরু থেকে পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দুই দফা দাবি আদায়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের যৌক্তিকতা বুঝে বিদ্যুৎ বিভাগ আরইবি সংস্কারকে সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করে সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য গত ১ আগস্ট ১৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়। এর আগে ওই কমিটির চারটি সভা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে দফায় দফায় সভা হলেও সরকারের সংস্কার উদ্যোগে আরইবির প্রত্যক্ষ অসহযোগিতার কারণে কমিটি চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দাবি আদায়ে পল্লীবিদ্যুতের কর্মীরা নানা কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছেন। এর মধ্যে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উপস্থাপন, গ্রাহকসেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে গত মে মাসে পাঁচ দিন এবং জুলাই মাসে ১০ দিন কর্মবিরতি, আগস্টে ‘লং মার্চ টু আরইবি’এবং এরপর ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটামে ‘গণছুটি ঘোষণা’র পর জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মসূচি প্রত্যাহারও করা হয়।
এরপর সারা দেশে একযোগে ডিসি অফিস ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিতকরণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীরা জানান, চলমান প্রেক্ষাপটে কোনো সমাধান না করে উল্টো পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে, ওই মামলায় গতকাল কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার এবং ২৪ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এসব বিষয়ে জানতে আরইবির চেয়ারম্যান, দুজন সদস্য এবং একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে দফায় দফায় ফোন দিয়েও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে চেয়ারম্যান এবং একজন সদস্যের ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।