
অনলাইন ডেস্কঃ
লাইনচ্যুত পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের বগি উদ্ধার হলেও সিগন্যাল সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গতকালও ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয় ছিল। ফলে কমলাপুর রেলস্টশনে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। প্রতিটি ট্রেন ছেড়েছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে। স্টেশনে এসেও ট্রেনে উঠতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
শুধু যাত্রা বিলম্ব নয়, অনেকের অভিযোগ আছে স্টেশনের ব্যবস্থাপনা নিয়েও। এছাড়া নানা সংস্কারের ভিড়ে রেললাইন অবহেলিত থাকায় ক্ষোভ জানান যাত্রীরা।
শিডিউল বিপর্যায়ের কারণে সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও জামালপুরগামী যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ট্রেন দুটির যাত্রা বাতিলের তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বিলম্বের কারণে সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (৭১৭) এবং জামালপুরের তারাকান্দিগামী যমুনা এক্সপ্রেসের (৭৪৫) যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে এবং যমুনা এক্সপ্রেস বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। যাত্রীদের টিকিটের রিফান্ড যথাসময়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার গোপীবাগে নারায়ণগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
সেদিন মধ্যরাতে কমলাপুর স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয় ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’। একইদিনে ঢাকায় দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় শুক্রবার থেকে কমলাপুরের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ ব্যাহত হয়। পাশাপাশি ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় সিগনাল ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ট্রেন চালানো হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এতে ট্রেনের সময়সূচি গড়বড় হয়ে যায়, যা ঠিক হয়নি গতকালও। এতে ভোগান্তিতে পরেন যাত্রীরা।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, সকাল পৌনে ৭টায় ঢাকা থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা। তবে ১০টা পর্যন্ত ট্রেন ছাড়েনি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছি স্টেশনে। পরে বেলা পৌনে ১২টায় এই ট্রেনটি ঢাকা ছেড়ে যায়।
গতকাল সকালে কমলাপুর স্টেশনে আসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় সিগনাল ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সময়সূচিতে সমস্যা হয়েছে। বিকাল নাগাদ সময়সূচি ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, রেলের ডিজি, সিগনাল ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা আমাকে জানিয়েছেন দুপুরের মধ্যে সিগনালিং ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। এটা পুনস্থাপিত হলে বিকেল নাগাদ সিডিউলের যে দীর্ঘ একটা বিপর্যয়- এটা আমরা সহনীয় মাত্রার মধ্যে নিয়ে আসব।
সচিব বলেন, যে ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে, ওই ট্রেনের যাত্রীরা চাইলে টিকেট ফেরত দিতে পারবেন। রিফান্ড করে দেওয়া হবে। অথবা কেউ যদি ওই রুটে চলা অন্য ট্রেনে যেতে চান, তাদেরকে আমরা অ্যালাউ করব।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র বলেছে, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকা থেকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের রুটের সবগুলো ট্রেন আটকা পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ট্রেনগুলো গাজীপুরের জয়দেবপুর, পুবাইল ও টঙ্গী, নরসিংদীর জিনারদি ও ঘোড়াশাল; ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে আটকে থাকে শুক্রবার দিনভর। এতে অনেক ট্রেন প্রায় পাঁচ-সাত ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়।
একই দিনে দুটি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (রেল) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। এ বিষয়ে রেলওয়ে কমান্ড্যান্ট মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, কমিটিকে দ্রুততম সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বরেন্দ্র এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল, সাড়ে ৩ ঘন্টা পর চলাচল স্বাভাবিক : বগুড়া থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার জংশন স্টেশন এলাকায় বরেন্দ্র এক্সপ্রেস আন্ত:নগর ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় ট্রেনটি উপজেলার সান্তাহার স্টেশন থেকে রাজশাহী অভিমুখে ছেড়ে যাওয়ার পর আউটার সিগন্যালের কাছে পৌঁছালে এ ঘটনাটি ঘটে। বিকল্প ইঞ্জিন এনে আটকে থাকা ট্রেনটি ফের রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেন সান্তাহার জংশন স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছে পৌঁছানোর পর ইঞ্জিনের ফুয়েল লাইন পুড়ে গিয়ে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এর ৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট পর ঈশ্বরদী থেকে বিকল্প ইঞ্জিন নিয়ে এসে ট্রেনটি ফের রাজশাহী অভিমুখে ছেড়ে যায়। সান্তাহার জংশনের স্টেশন মাস্টার খাদিজা খাতুন জানান, ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় বরেন্দ্র এক্সপ্রেস আন্ত:নগর ট্রেনটি আউটার সিগন্যালের কাছে আটকা পড়ে। ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর ঈশ্বরর্দী থেকে বিকল্প ইঞ্জিন এনে চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।