
১৯৯৬ সালের শেষের দিক, তথন আমি দৈনিক জনতায়। সম্পাদক প্রয়াত ফকির আশরাফ, অফিস করছি। এমন সময় ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে ফোন এলো, আমায় বলা হলো, সম্পাদক সাহেব আমায় খুজছেন। কিছুক্ষন বাদেই আমি তার রুমে গেলাম, তিনি একটা এসাইনমেন্ট দিলেন শাওন ও হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে। তাদের পরকিয়া প্রেম নিয়ে।
আমি বরাবরই পলিটিক্যাল বিট করি, শাওন কে চিনিনা তখনো কিন্ত হুমায়ুন আহমেদের নাম শুনেছি। তাদের প্রেম তখন তুঙ্গে। প্রেমের এসাইনমেন্ট পেয়ে ঘাবড়ে গেলাম, সিনিয়র কলিগ ও পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক শাহীন রেজার সাথে আলাপ করলাম। তিনি আস্বস্ত করলেন, নিউজের কিছু টিপস দিলেন। একদিকে গুলতেকিনের সাথে সংসার, অন্য দিকে টিনএজ আবার মেয়ের বান্ধবি শাওনের সাথে পরকিয়া প্রেম। আমিও এমন এসাইনমেন্ট পেয়ে একসাইটেড।
পরদিন যথারীতি হুমায়ুন আহমেদকে ফোন করলাম। তার সাথে কথা বলতে চাইলাম। তিনি তখন কাকরাইলের আসিফ ম্যানসনে বসতেন, এটা ছিলো নুহাস চলচিত্রের অফিস। ল্যান্ড ফোনে ফোন দিতেই ওপাশ থেকে তার ম্যানেজার ফোন ধরলেন, আমি নিজের পরিচয় দিয়েই জিজ্ঞাসা করলাম, হুমায়ুন ভাই আছেব?
তার ম্যানেজার একটা ধাক্কা খেলো, আমার পরিচয় জানতে চাইলো আবারও। বলা বাহুল্য আমি আমার পরিচয় দিয়েই ফোন দিয়েছিলাম। ম্যানেজার আমায় জিগ্যাসা করলো, আমি কোন পাতার রিপোর্টার ?
এবার আমার অবাক হবার পালা, ম্যানেজার বললো, সব রিপোর্টাররা হুমায়ুন আহমেদকে স্যার বলে ডাকে, আমার ইগোতে বাধলো।
বয়সে আমি তরুন, নানা কারনে হুমায়ুন আহমেদ তখন বিতর্কিত, আমি তাকে নিয়ে নিউজ করতে যাচ্ছি, মনের মধ্যেই প্রশ্ন, কেন তাকে স্যার বলতে যাবো?
শাহীন রেজা আমায় বুঝালেন, পরে ওটা নিয়ে সিরিজ নিউজ করেছিলাম। নিউজ প্রকাশের সেকেন্ড দিনেই হিউজ ফোন পেলাম। নিউজ রীতিমতো হিট। ওই সময়ে হুমায়ুন আহমেদের বেশ নাম ডাক, লেখক হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকতা করেন, সাংবাদিকদের অনেকেই তাকে সমীহ করেন। তাকে নিয়ে বা তার পরকিয়া নিয়ে কেউ নিউজ করতে পারেন বা পারবেন এটা ছিলো কল্পনার বাইরে, অন্য দিকে শাওনের মা তখন আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত আসনে এমপি প্রার্থী ছিলেন, পরে ২০০৮ এ এমপি হন তিনি। নিউজ বন্ধ করার জন্য অনেকেই রিকোয়েস্ট করতে লাগলো!
সাংবাদিক, অভিনয় জগতের অনেকেই ফোন করেছিলেন, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর নিজেও ফোন দিয়েছিলেন। পরে হুমায়ুন আহমেদের সাথে দু দফায় বসেছিলাম। একবার সোনারগাঁ হোটেলে, আরেকবার তার অফিসে। উনি আমায় পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেপেছিলেন।
নুর ভাই হোটেল সোনারগাঁওয়ে মিটিংয়ে ছিলেন। অভিনেতা প্রয়াত মোজাম্মেল স্যারও ছিলেন এক মিটিং এ, পরে মোজাম্মেল স্যার আমার এক নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন।
হুমা্য়ুন আহমেদ পরে আমায় বন্ধু হিসাবে সম্বোধন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে নিউজ করলেও তিনি আমার সাথে এতটুকুন খারাপ ব্যবহার করেন নি। তার উদারতায় আমি মুগ্ধ, রীতিমতো বিস্মিত ছিলাম। অনেক বড় মাপের মানুষ ছিলেন তিনি।
হুমায়ুন আহমেদ আজ নেই, কিন্ত তার কীর্তি বেচেঁ আছে সবার মাঝে। ভালো থাকুক মহান এই মানুষটি।
আজ তার জন্ম দিন, শুভ জন্ম দিন প্রিয় স্যার হুমায়ুন আহমেদ। আল্লাহ আপনাকে বেহশত নসীব করুক।
লেখক: শাহীন রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক