
অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেফতার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইস্যু নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের পর আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোকসভায় এ নিয়ে বিবৃতি দেবেন বলে জানা গেছে। খবর এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা, বিবিসি বাংলার।
এনডিটিভি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতার, সংখ্যালঘুদের কথিত ‘নিরাপত্তাহীনতা’ এবং চট্টগ্রামে একটি মন্দির ভাঙচুরের বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে। আগামীকাল (শুক্রবার) সংসদের দুই কক্ষে এ ইস্যু নিয়ে জয়শঙ্কর বিবৃতি দেবেন বলে এনডিটিভি জানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দলগুলোও এই ইস্যুতে কোনো আপত্তি তুলবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের সংসদেও বাংলাদেশ ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, লোকসভায় (সংসদে) বেশ কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেন। তারা জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা বেড়েছে কি না। ভারত সরকার এই বিষয়টি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উত্থাপন করেছে কি না। এসব প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং সংসদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে হিন্দু মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার তথ্য শোনা গেছে। ভারতীয় সরকার এ ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। যার মধ্যে তাঁতীবাজারে পূজামণ্ডপে হামলা, সাতক্ষীরার কালীমন্দির থেকে দুর্গাপূজার সময় সোনার মুকুট চুরির ঘটনা রয়েছে। ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর প্রার্থনাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ভারত বাংলাদেশকে বলেছে সংখ্যালঘুসহ দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের।’ এর আগে চিন্ময় দাসকে গ্রেফতারের পরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পালটা বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল ‘এটি ঢাকার অভ্যন্তরীণ বিষয়’।
কেন্দ্রীয় সরকারের সমাধানের বিষয় : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, অন্য দেশের বিষয় হওয়ায় এ নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিধানসভায় মমতা বাংলাদেশের বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘এই সমস্যাটি কেন্দ্রীয় সরকারের সমাধানের বিষয় এবং রাজ্য সরকার কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ভিন্ন দেশ। ভারত সরকার এটা দেখবে। এটা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আমাদের এ নিয়ে কথা বলা বা হস্তক্ষেপ করার কথা নয়। আমরা ভেতরে ভেতরে দুঃখ পেলেও কেন্দ্রের নির্ধারিত নীতি অনুসরণ করি।’
মমতা বলেন, ‘কোনো ধর্মের ওপরেই আঘাত আসুক আমি চাই না। এখানে ইসকনের যিনি আছেন, তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এটা যেহেতু অন্য একটি দেশের বিষয়, তাই কেন্দ্রীয় সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ইস্যুতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের পাশেই আছি।’
এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইস্যুতে বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেত্রী এবং সদ্য নির্বাচিত সংসদ-সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধরাও। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপরে ক্রমাগত ঘটে চলা সহিংসতার সংবাদ অত্যন্ত চিন্তাজনক।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করব, যাতে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয় এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়।’
কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসে স্মারকলিপি : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন। এ কর্মসূচি ঘিরে শুরু থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল কলকাতা পুলিশ। মিছিল এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ। বেকবাগানের কাছে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। এতে এক পুলিশ সদস্যের মাথা ফেটেছে। অবশেষে পাঁচ জনের একটি প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ উপদূতাবাসে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে তারা একটি স্মারকলিপি জমা দেন। বাংলাদেশ উপদূতাবাস থেকে বের হয়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা চিন্ময়ের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তারও দাবি জানিয়েছেন।