
আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে আমি বাসায়। এত বয়সেও আমি আমার মায়ের জন্য এত কিছু করতে পারিনি যা আমার মেয়ে এই পাঁচ বছরে আমার জন্য করেছে। বিষয়টি সত্যি অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য, এক কথায় অসাধারণ।
সন্তান মায়ের ঋণ কখনই শোধ করতে পারে এভাবে এটা আমার জানা ছিলো না। পাঁচ টা বছর অক্লান্ত পরিশ্রম, আর মায়ের সেবা করে এভাবে মাকে বার বার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনা একটা সন্তানের জন্য কতোটা কঠিন, ও কষ্টসাধ্য সেটা যে করে সে আর আল্লাহ ছাড়া কেউ বুঝতে পারে না।
মাকে সুস্থ্য করার জন্য শারীরিক কষ্টের সাথে অকল্পনীয় মানসিক চাপ আর কষ্ট যে পরিমাণ হয়েছে সেটা লিখতে আমার এখনের ধর্য্য সীমার বাইরে। পরে ইনশাআল্লাহ লিখব। যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে আমার মেয়ের সময় কেটেছে সেটা না দেখলে বলে বোঝানো কঠিন।
এক হাতে মাকে নিয়ে হসপিটাল এ যাওয়া, টেস্ট করা, ডক্টর দেখানো, লাইন এ দাড়িয়ে টাকা দেয়া, মেডিসিন কেনা, আবার অপারেশন থিয়েটার এর সামনে মায়ের জন্য অপেক্ষা করা, রাতে মায়ের সাথে থাকা, একই সাথে সারা রাত জেগে মাকে দেখা, ভোর হতে না হতেই বাসায় ফিরে মায়ের জন্য রান্না করা, আবার হাসপাতালে ফিরে মাকে দেখা এটাই এই পাঁচ বছরে বহু বার সে করেছে। তাকে করতে হয়েছে।
কি যে বলি, মা হিসাবে কষ্ট পাওয়া আর দেখা ছাড়া তো আমার কিছুই করার থাকে না। তাই বললাম, মায়ের ঋণ এভাবে শোধ করা যায়? এটা কজন সন্তান পারে? আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন আমার সন্তানদের সুস্থ্য রেখে, ঈমানের সাথে নেক হায়াত দান করেন। সারা জীবন ভালো রাখেন। সুখী রাখেন। সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
ছেলেটার কপাল এত খারাপ আমার যখন প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখনও খুলনাতে লকডাউনে সে আটকা পড়ে। তখন ভয়াবহ করোনা। আবার এখনও সে দেশের বাইরে। ছেলেটারও মন খুব খারাপ। আসলে আল্লাহ ভালো জানেন, উনি কাকে দিয়ে কখন, কি করাবেন। সবার কাছে আমার সন্তানদের জন্য দোয়া চাই, আল্লাহ ওদের ভালো রাখুন। ভালো মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করুন।
ভ্যালোরে চিকিৎসাধীন হোটেল ৭১ এর সিইও ইয়াসমিন নাহার মুন্নির ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া