
অনলাইন ডেস্কঃ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়, একুশে মানে জেগে ওঠা, একুশ আমাদের দৃঢ় বন্ধন। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান যার প্রমাণ। শনিবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৫’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাইয়ের চেতনায় এবারের বইমেলা আয়োজন করা হয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়। মাত্র ৬ মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থান জাতিকে ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত একটা দেশকে দ্রুতগতিতে নির্দিষ্ট গন্তব্য পৌঁছে দিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি। একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে, প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময়ে দেয়ালে লেখা তাদের দাবিগুলো এঁকে দিয়েছে। এগুলো আমাদের বুকের মধ্যে ও জাদুঘরে রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনে অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেছে। ক্রমে ক্রমে এর গুণগত পরিবর্তন হতেই থাকবে। বইমেলায় বই হাজির করার জন্য লেখক লেখিকারা সারা বছর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সেরা লেখক লেখিকা ও প্রকাশকদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করলে তারা আরো আগ্রহ ও উৎসাহ পাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, তরুণ লেখকদের জন্য বই পড়া এবং গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমি। তবে বাংলা একাডেমিকে সর্বাত্মক গবেষণার দিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কারের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো যোগাযোগ থাকে না। বাংলা একাডেমি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দেখা গেলো, স্বায়ত্তশাসনের সুযোগের অপব্যবহারে ফ্যাসিবাদের দোসররা ওখানে ঢুকে গেছে। পরে বাংলা একাডেমির পুরস্কার কমিটির সভায় পুরস্কার স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। এই পুরস্কার কে পাবে না পাবে এর মধ্যে আমার রুচির কোনো ছাপ নেই, কোনো প্রভাব নেই।
সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে জানিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, সেটা যদি আমাকে গালাগালি করেও হয়, এতে কিছু যায় আসে না। আর বই প্রকাশ সেন্সর করব, এটা হাস্যকর। এই ভুল-বোঝাবুঝি এখানেই দূর করতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের বই সেন্সরের পরিকল্পনা নেই। বই ছাপানোর আগে সরকার পড়ে দেখবে এমন কোনো বক্তব্য কেউ দেয়নি। এই সরকার মতপ্রকাশের অধিকারে বিশ্বাস করে বলেও জানান তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আজম। এদিকে উদ্বোধনের পর প্রধান উপদেষ্টা বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।