
অনলাইন ডেস্কঃ
ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, মামলা-হামলাসহ নানান রকম সংকটে থাকা ব্যবসায়ীরা এখন অসহায়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সহায়তা না পেয়ে শিল্প মালিকরা অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা শিল্পকারখানা নিয়ে এখন চরমভাবে শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না।
বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চাপিয়ে দেওয়া নানান রকম সিদ্ধান্তের কারণে আমরা বর্তমানে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট করা হয়েছে। ডলারসহ নানান সংকটে সব দিকে কেবলই শূন্যতা তৈরি করে রেখে গেছেন শেখ হাসিনা সরকার।
ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঋণের ৯ শতাংশ সুদ বেড়ে এখন সাড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে আলোচনা করছে না। আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও সমস্যা অনেক কমে যেত।
আগের রাজনৈতিক সরকারগুলো ব্যবসায়ীদের কথা শুনত। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন ও সহায়তায় গঠিত কমিটির সদস্য ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ এ বিষয়ে বলেন, ‘শিল্পপতিদের আস্থায় নিতে হবে। বিশেষ করে তাঁদের কারখানায় কোনো ভাঙচুর, বিশৃঙ্খলার বিপক্ষে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা শিল্পকারখানায় ব্যাংকগুলোরও বিনিয়োগ রয়েছে।
সরকারের রোষানলে পড়লে তাঁদের শিল্প-ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান বন্ধ হবে। ব্যাংকগুলো কিস্তির টাকা পাবে না। এত সব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অনেকেই শিল্প রক্ষায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁরা কোনো রাজনীতি করেন না। বরং দুষ্টু রাজনীতির চালের শিকার হয়ে সরকারের বলির পাঁঠা হন তাঁরা। যাঁরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করে সরকারকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব দিচ্ছেন, তাঁরাই আজ নাজুক পরিস্থিতির শিকার। সরকার যেখানে তাঁদের আস্থায় নিয়ে পাশে থাকার কথা, সেখানে তাঁদের দেখা হচ্ছে সন্দেহের চোখে। ব্যবসায়ীদের কোনো দল নেই বলে দাবি করেছেন তাঁরা। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত নন তাঁরা। পরিস্থিতির শিকার হয়ে কোনো কোনো ব্যবসায়ী বিশেষ কারণে আগের সরকারের সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য হলেও প্রকৃতই তাঁরা তাঁদের শিল্প বাঁচাতে চেয়েছেন। এখনো তাঁরা দেশ, অর্থনীতি ও মানুষের স্বার্থে তাঁদের শিল্পকেই অগ্রাধিকার দেবেন। তাঁরা সব সরকারের সঙ্গেই কাজ করতে চান। কিন্তু যে সরকারই আসে, তারা মনে করে ব্যবসায়ীরা বিগত সরকারের লোক। বিষয়টিকে একটি ভ্রান্ত ধারণা বলেই অভিহিত করেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে নিট পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, সমাজে সবাই খারাপ ব্যবসায়ী না। সবাই চোর নয়; ভালোও তো আছেন। তাঁদের নিয়ে অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি এ সরকারের কাছে যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল, সেটা পায়নি। ব্যবসায় সরকারের যথেষ্ট ফোকাস নেই, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের মধ্যেও ইউটিলিটির পেছনে বাড়তি খরচ, আবারও দাম বাড়ানোর উদ্যোগ; সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে কিংবা যাবে এটাই স্বাভাবিক। যখন-তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সাত দিন-১০ দিন সময় নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না। কোনো একটি সিদ্ধান্তের পর এর প্রভাব কী হতে পারে তা পর্যালোচনা করা দরকার আগে। এটা করলে আর অস্থিরতা তৈরি হতো না।
এ বিষয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ বলেন, চ্যালেঞ্জিং সময়ে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে উৎপাদনমুখী খাতে পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। কমবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। নতুন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্যাসের দাম বাড়লে অনেক শিল্প বন্ধ হবে, তখন মন্দ ঋণ বাড়বে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন