
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ঈদ শেষ। দলের নেতা-কর্মীদের কৌতুহলী চোখ পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে। জানা গেছে, খুলনা মহানগর বিএনপির নব নির্বাচিত পাচ নেতা নিজেদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে অবশেষে বসতে যাচ্ছেন। সুত্র বলছে, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এই সভা হবে, এমনটা আভাস পাওয়া গেছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে মহানগর সভাপতি-:সাধারণ সম্পাদক নিজেরা হোমওয়ার্ক শুরু করছেন।
মহানগর বিএনপির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন এমন খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তুহিন জানিয়েছেন, সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক এবং তিন সাংগঠনিক সম্পাদককে নিয়েই তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে অচিরেই বসবেন। তুহিন বলেছেন, কমিটি হবে কর্মীবান্ধব, বিতর্ক মুক্ত।
সুত্র বলছে, ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য নির্বাচিত পাচ জন বাদ দিয়ে প্রার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। সবাই নেতা হতে চায়। মহানগর কমিটিতে আসতে চায়। সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন দুজনাই চেষ্টা করছেন নগরবাসীকে প্রকৃত অর্থেই একটি ভালো কমিটি উপহার দেয়ার জন্য।
সুত্র বলছে, সেক্ষেত্রে দলের ত্যাগী নেতারা প্রাধান্য পাবেন। মহানগর কমিটিতে আসার পূর্বশর্ত হিসাবে গত ১৫ বছরে নেতাদের আন্দোলন- সংগ্রামে ভুমিকা দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবন বিতর্কমুক্ত কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের নেতাদের কমিটিতে নেয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বিশেষ করে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরে সম্ভাব্য নেতারা কোন দখল, চাদাবাজি বা অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিলেন কিনা, সেটাকেও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
দুই নেতার ঘনিষ্ঠ একাধিক সুত্র দাবি করেছে, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক, তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রাপ্ত ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের সাথে ভোটের পার্থক্য নিয়ে দুই নেতাই এবার সতর্ক। কাউন্সিল অধিবেশনে ভোটার বা ডেলিগেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সহ- সভাপতি পদে তরিকুল ইসলাম জহির ও সাধারণ সম্পাদক পদে চৌধুরী নাজমুল হুদা সাগর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়ে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দেন।
জানা গেছে, সিনিয়র সহসভাপতি পদে জহির শক্তিশালী অবস্থানে। এর বাইরেও সিনিয়র সহসভাপতি প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় আছেন, সাবেক যুবদল নেতা, মঞ্জু- মনি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম, সিটি মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক, ডাক্তার বাবলু, আব্দুর রহমান, সাবেক যুবদল নেতা ইশতিয়াক উদ্দিন লাভলু।
ফখরুল জানান, খুলনা বিএনপির রাজনীতির অভিভাবক হিসাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন রকিবুল ইসলাম বকুল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারি হেলাল। খুলনা বিএনপি ও নেতাদের সব কিছুই তাদের নখদর্পনে। ফখরুলকে সিনিয়র সহসভাপতি পদে দেয়া হবে কিনা, বিষয়টি তিনি বকুল- হেলালের পরেই ছেড়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফখরুল সম্পর্কে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিনের আপন বড় ভাই।
অন্যদিকে, আলোচনাকালে জহির কোন মন্তব্য করেন নি। জহিরের ঘনিষ্ঠ সুত্রমতে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন জহির। সিনিয়র সহসভাপতি পদ পাবেন কিনা সেটা নিয়েও তেমন টেনশন কাজ করছে না। একই কথা বলেছেন ডা: বাবলু। সিটি মেডিকেলে নিজ চেম্বারে আলাপকালে ডাক্তার বাবলু বলেছেন, এখন তরুনদের জোয়ার। তিনি ব্যাকফুটে থাকতে চান।
অন্যদিকে, ইশতিয়াক উদ্দিন লাভলু বলেছেন, দল দায়িত্ব দিলে তিনি পালন করবেন। লাভলু বলেছেন, সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন আছে, দলের খুলনার রাজনৈতিক অভিভাবক রকিবুল ইসলাম বকুল আছেন। দেখা যাক, তারা কি সিদ্ধান্ত নেয়।
একইভাবে দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে শক্তিশালী প্রার্থী নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর। গেলো সম্মেলনে সাগর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন থেকে ৪৪ ভোট পিছিয়ে থেকে নতুন করে আলোচনায় ছিলেন। তবে অতি সম্প্রতি তার চাদাবাজির একটি অডিও ফাস হয়ে যাওয়ায় সাগর বেশ বিতর্কিত অবস্থানে আছেন।
সুত্র বলছে, অডিও কেলেংকারির ঘটনা ফাস হওয়ায় সাগরকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হতে পারে। অডিও ক্যাসেটে চাঁদাবাজির ঘটনায় দলের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন জানিয়েছেন, সাগরকে বহিষ্কার করা হবে কিনা, এটা কেন্দ্র জানে। এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্র দেবে।
অভিযুক্ত সাগর তার ঘনিষ্টজনদের বলেছেন, দল কি সিদ্ধান্ত নেয়, সেটার অপেক্ষায় আছি।
সুত্র বলছে, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসাবে সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত প্রার্থী কাজি মাহমুদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম হোসেন আছেন। হোসেন এই মুহুর্তে খুলনা বিএনপির অভিভাবক রকিবুল ইসলাম বকুলের সবচেয়ে কাছের মানুষ। বকুলের খুবই আস্থাভাজন সিটি কলেজের সাবেক ভিপি হোসেন।
মনা- তুহিনের ঘনিষ্ঠ সুত্রমতে, নানা বিবেচনায় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে চান তারা। বিশেষ করে আগামীতে জাতীয় ও মেয়র নির্বাচন। সেই বিবেচনা মাথায় রেখে বিএনপির সাথে সাধারণ ভোটারদের কঠিন যোগসুত্র গড়ে তুলতে কমিটিকে ঢেলে সাজাতে চান। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে হয়ে যাওয়া সফল সম্মেলনের মতোই সারা দেশে খুলনাকে মডেল হিসাবে তুলে ধরতে চান।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে এডভোকেট শফিকুল আলম মনা সভাপতি, শফিকুল আলম তুহিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই দিনে তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদকও কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। খুলনা মহানগর বিএনপির এই সম্মেলন সারা দেশে বিএনপি নেতা- কর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রশংসা পায়।