
বিশেষ প্রতিনিধি:
চাঁদাবাজি মামলায় সদ্য কারামুক্ত বিএনপি নেতা, সাবেক যুবদলের নেতা মাহবুব হাসান পিয়ারু নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। বলেছেন তিনি অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তবে, সেনিসিটিভ ইস্যু হওয়ায় কৌশলগত কারণে আবেগে আপ্লুত পিয়ারু সেই অদৃশ্য শক্তির নাম বলেন নি। তবে বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে মামলায় জেল খাটতাম, কোন আপত্তি- কষ্ট ছিলো না। কিন্তু এই সময়ে জেলা খাটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। হাসিনা সরকারের পতনের পরে বর্তমান সরকারের আমলে জেল খাটা খুব দু:খজনক, আপত্তিকর একইসাথে বিব্রতকর তাও যদি আমি অপরাধ করে থাকতাম। দোষ করতাম।
মাহবুব হাসান পিয়ারু। সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ ক্রীড়া সম্পাদক দিয়ে রাজনীতি শুরু। পরে মহানগর ছাত্র দলের সহ সভাপতি। আরও পরে মহানগর ছাত্র দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। পরে যুব দলের মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য। সোনাডাঙ্গা থানা যুব দলের সভাপতি। এর পরে মহানগর যুবদলের সভাপতি।
পরে খুলনা বিভাগের দায়িত্বে যুব দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি, অবশেষে খুলনা মহানগর বিএনপির বিদায়ী যুগ্ম আহবায়ক। অতি সম্প্রতি, খুলনা মহানগর বিএনপির অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পিয়ারু সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে হেরে যান। বিএনপির সম্মেলনে তৃণমূল থেকে উঠে আসা পিয়ারু প্রকৃত অর্থেই আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক নেতা৷ এই পর্যন্ত ১০৭ টা মামলা খেয়েছেন শেখ হাসিনার আমলে, দুই দুবার বডি ওয়ারেন্ট হয়েছে, ক্রস ফায়ার থেকে বেঁচে গেছেন একাধিকবার।
পিয়ারু আরো জানান, জেল থেকে বের হবার পরে খুলনা মহানগর বিএনপির নেতাদের সাথে দেখা করেছি। সেদিনের ঘটনার যাবতীয় তথ্য- উপাত্ত নেতাদের সামনে তুলে ধরেছি। নেতাদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছি, নূন্যতম অপরাধ করে থাকলে আমার বিচার করেন। অপরাধের সাজা মাথায় পেতে নেবো। অপরাধ করে না থাকলে সাময়িক বরখাস্ত তুলে নিন- এমন দাবি পিয়ারুর।
তবে পিয়ারু তার দ্রুত মুক্তিতে মহানগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা, পাড়ার এক বড় ভাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতার ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজ অফিসে বসে আলাপকালে পিয়ারু সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জানান, ২১ রোজার দিন তারাবি নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে নগরীর আজাদ লন্ড্রির মোড়ে একদল ছাত্রের ভিড় দেখে তাদের অনুরোধে আমি দাড়াই।
তারা অভিযোগে জানায়, সেখানে ভিন জেলার এক সন্ত্রাসী পরিচয় গোপন রেখে বসবাস করছে। খুলনার একদল শিক্ষার্থী সেই বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। উৎসুক ছাত্র- জনতার ভিড়ে বাড়িওয়ালা দরজা খুলতে ভয় পেলে পিয়ারু নিজের পরিচয় দিয়ে বাড়িওয়ালাকে দরজা খুলতে অনুরোধ করেন পাশাপাশি জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশকে আসতে অনুরোধ করেন৷
পিয়ারু দাবি করেন, বাড়ির দরজা খোলার পরে সেখানে অবস্থানরত ভিনদেশির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে গাজিপুর জেলার বাসিন্দা পরিচয় দেন। মামলা আছে কিনা কিংবা তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পিয়ারুকে গাজিপুরের সেই ভদ্র লোক নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি টুকটাক আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। আওয়ামী লীগে তার কোন রাজনৈতিক অবস্থান নেই, ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোন রাজনীতিও করেন না।
আলোচিত ব্যবসায়ীর উদ্ধৃতি দিয়ে পিয়ারু আরও জানান, তার মেয়ে সমাজকল্যাণে চাকরি করেন, সেই সুবাদে তিনি খুলনার বাসায় বেড়াতে এসেছেন। আলাপচারিতায় সন্দেহ হলে পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে পিয়ারু গাজিপুরে জনৈক যুবদলের নেতাকে ফোন করে ওই ব্যবসায়ীর পরিচয় জানতে চায়। একইসাথে পিয়ারু হোয়াটসঅ্যাপে তার ছবি পাঠায়।
তখনি তার পরিচয় নিশ্চিত করে গাজিপুর থেকে পিয়ারুর পরিচিত সেই যুবদল নেতা জানায়, তিনি গাজিপুরের শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, নাম নূর মোহাম্মদ মোল্লা। চারটা হত্যা মামলা রয়েছে। ছেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী। ৫ আগস্টের আগে বাপ বেটা নিয়মিত অস্ত্র হাতে খোলা জিপে সন্ত্রাসীদের নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করেছেন।
পিয়ারুর দাবি মতে, ঘটনার পরে সেই রাত্রেই পিয়ারু বাসায় চলে যান। পরদিন সন্ধ্যা হতেই পিয়ারুর মোবাইলে ফোন আসতেই থাকে। ফোনের লোকেশন মতে ময়লাপোতা মোড়ের পাশে গ্রান্ড প্লাসিড হোটেলের সামনে আসতেই পিয়ারু জানতে পারে, সেই ব্যবসায়ীকে রাতে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। কেন ব্যবসায়ীকে পুলিশের হাতে না দিয়ে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে, এই জন্য পিয়ারু ওদেরকে রাগারাগি করেন৷
এর মধ্যেই সেখানে হাজির হন স্থানীয় একটি দৈনিকের নির্বাহী সম্পাদক, আসেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। তারা জানায়, ব্যবসায়ীর স্ত্রী তাদের পরিচিত, সমন্বয়কের ক্লাসমেট, এই জন্যই ব্যবসায়ীকে আত্মীয়ের পরিচয়ে অন্য বাসায় এনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই সেখানে হাজির হয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। ওদেরকে মুহুর্তেই ঘিরে ফেলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। একে একে গ্রেফতার হয়ে যায় সবাই।
অভিযোগ উঠে, সেই ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে কোটি টাকা চাঁদা দাবি করায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আলাপকালে পিয়ারু দাবি করেছেন, তার কাছে বা তাদের কাছে রিকভারি কিছুই পাওয়া যায় নি। চাঁদা দাবি করেছেন, এমন কোন কলরেকর্ড পাওয়া যায় নি।
পিয়ারু নিজেই দাবি করে বলেছেন, তিনি নিজেই ৯৯৯ তে ফোন করেছেন, বাড়িওয়ালাকে বলে কয়ে ভাড়াটিয়াকে বের করেছেন, তার পরিচয় শনাক্ত করেছেন, একজন অপরাধীকে ধরিয়ে দিয়েছেন।
সব কিছুই করেছেন শত শত জনগনের সামনে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে তিনি সমাজে হেয় হয়েছেন। মান সম্মান খুইয়েছেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রশ্নের সম্মুখীন। তার সামাজিক অবস্থানের যে ক্ষতি হয়েছে, সেট পূরণ হবার নয়।
পিয়ারু দাবি করেছেন, সত্য উদঘাটনের আগেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কোন প্রকার তদন্ত করা হয় নি। দলের সূত্র উল্লেখ করে পিয়ারু জানান, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সামনে তিনি বসতে প্রস্তুত। ঘটনার সত্যতা জানাতে প্রস্তুত। পিয়ারু আশাবাদী, দল তাকে সেই সুযোগ দেবে, তার বক্তব্য শুনবে। বক্তব্য শুনার পরে দিল যদি তাকে দোষী মনে করে, তবে দলের দেয়া যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নেবে রাজপথে জীবন বাজি রেখে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকা এই তরুণ।
অন্যদিকে, গোয়েন্দা পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।