
অনলাইন ডেস্কঃ
নানা যুগসন্ধিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, বাংলাদেশে বাম রাজনীতি আদর্শিক ও সাংগঠনিক দিক থেকে তেমন সফলতা পায়নি। জনসম্পৃক্ততার অভাব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ঘাটতি এবং বিতর্কিত রাজনৈতিক অবস্থান-এই তিন মিলিয়ে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে দেশের বাম ঘরানার রাজনীতি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বামপন্থিদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও রুশ বিপ্লবের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কমিউনিস্ট আন্দোলন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পেরিয়ে, তার ধারাবাহিকতায় স্বাধীন বাংলাদেশেও বামপন্থিরা রাজনৈতিক পরিসরে প্রবেশ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা দ্বিধাবিভক্ত হলেও, স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে তাদের নেপথ্য অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বাম রাজনীতি ধীরে ধীরে গতি হারাতে থাকে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘১৯৮৯ সালে যখন বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন দুইটা দল মনে করলো এখন রাজনীতির মাঠে শুধু তারাই আছে। অন্য কেউ নেই। এ প্রেক্ষাপট চ্যালেঞ্জ করার মতো প্রস্তুতি বা নেতৃত্ব বামপন্থিদের ছিল না।’
তার মতে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটি অংশের জোটবদ্ধ রাজনীতি ও জুলাই অভ্যুত্থানে দ্ব্যর্থপূর্ণ অবস্থান বাম রাজনীতির ভিত্তিকে আরও দুর্বল করেছে। তিনি বলেন, “১৪ দলের ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব হাসিনা’ তত্ত্বে কিছু বাম নেতার আশ্রয় নেয়া এবং বাকিদের মধ্যে ‘এই আন্দোলনে আমাদের লাভ কী’ মনোভাব-এই দ্বিধা তাদের রাজনৈতিক ইন্টারভেনশনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘রাজনীতিতে যখন অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঢুকে পড়ে, তখন আদর্শ হারিয়ে যেতে বাধ্য। বাম রাজনীতিতেও সেই প্রভাব পড়েছে।
তিনি মনে করেন, আদর্শকে সহজভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরতে না পারাটাই বামপন্থিদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তিনি আরও বলেন, এখনও অনেক মানুষ আছেন, যারা বাম আদর্শ ধারণ করে বেঁচে আছেন। এটাই এক ধরনের সোশ্যাল ক্যাপিটাল। নতুন বাস্তবতায় তাদের সঙ্গে কাজ করা গেলে দেশের জন্য তা ইতিবাচক হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ছালেহ শাহরিয়ার বলেন, ‘বাম রাজনীতির ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল মনে হয় না। তাদের আরও জনকেন্দ্রিক কর্মসূচি নিয়ে আসতে হবে।’
তার মতে, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, ছাত্র- এদের সমস্যাকে কেন্দ্র করে এখন আর বামপন্থিদের কোনো কার্যকর এজেন্ডা নেই। দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব, দুর্নীতি-এসব জনমুখী ইস্যু থেকে বাম রাজনীতি অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বামপন্থি রাজনীতি এক সংকটময় সময়ে দাঁড়িয়ে। আদর্শ ও বাস্তবতার সমন্বয় ঘটিয়ে, নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে না পারলে, বাম রাজনীতি ভবিষ্যতেও প্রান্তিকতার গণ্ডি পেরুতে পারবে না।