
অনলাইন ডেস্কঃ
সম্প্রতি কুমিল্লার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইস্যু করা একটি লাইসেন্সের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। লাইসেন্সটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেনের নামে। এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক ও সমালোচনার মাঝে বৃহস্পতিবার লাইসেন্সটি বাতিল করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। বিষয়টি নিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বিল্লাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে ছেলের ক্ষমা চাইতে হবে জানলে এ লাইসেন্স করতাম না। ছেলের এত বড় ক্ষতি হবে, ছেলে আমার জন্য সমালোচিত হবে সেটা জানলে বাবা হিসাবে এটা কখনোই করতাম না। বিষয়টা এতদূর গড়াবে, বুঝতে পারিনি। প্রধান শিক্ষক হয়ে ঠিকাদারি কাজ করা যাবে না-এমনটা আমার জানা ছিল না। তাছাড়া এটা যে করা ঠিক হবে না, স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বরতরাও আমাকে বুঝিয়ে বলেননি।’
‘আপনার ছেলে বলেছেন, একজন ঠিকাদারের পরামর্শে লাইসেন্সটি করেছেন-তিনি কে?’ এর জবাবে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘অন্য কোনো ঠিকাদার নয়, এলাকার বেশ কয়েকজন বেকার যুবক একটি লাইসেন্স করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে। আমি একটা লাইসেন্স করে দিলে তারা কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করবে বলে জানায়। আমি ভেজাল-টেজাল বুঝি না। ওই ছেলেদের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন কাজগুলো টেকসই হবে-এমনটা ভেবে লাইসেন্সটি করার উদ্যোগ নেই।’ এলাকার ওই যুবক কারা- জানতে চাইলে বিল্লাল হোসেন তাদের নাম বলতে রাজি হননি।’
আসিফ মাহমুদের বাবা বলেন, ‘আমি ওই লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজ করিনি। কিছু মানুষ বিষয়টি নিয়ে এমনভাবে সমালোচনা করছেন, মনে হয় যেন আমি পাহাড়সম অপরাধ করে ফেলেছি। মুরাদনগরে অন্য রাজনীতিবিদ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কি পরিমাণ ঠিকাদারি কাজ করেছেন এবং নামে-বেনামে তাদের কতগুলো লাইসেন্স আছে সে খবর নিয়ে দেখেন। আমরা তো কারও অপকর্মের সমালোচনা করি না। আমরা মানুষের কোনো ক্ষতি করি না। পারলে উপকার করি।’
তিনি বলেন, ‘আমি তো সবজান্তা না, কিভাবে সব আইন জানব? যখন জেনেছি তখন তো লাইসেন্স ক্যানসেল করে দিয়েছি।’
অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি লাইসেন্সের ছবি পোস্ট করেন। এতে তিনি লেখেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পিতা বিল্লাল হোসেনের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি ঠিকাদারি তালিকাভুক্তির কপি হাতে এসেছে। লাইসেন্সটি যাচাই করে দেখা যায়- এ বছরের ১৬ মার্চ নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (কুমিল্লা) লাইসেন্সটি ইস্যু করে।
এ বিষয়ে জানতে আমি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর যাচাই করে জানান, লাইসেন্সের বিষয়টি সঠিক, কিন্তু এটা তার জ্ঞাতসারে করা হয়নি। স্থানীয় জনৈক ঠিকাদার তার শিক্ষক পিতাকে ঠিকাদারি লাইসেন্সটি করতে প্ররোচিত করেন। উপদেষ্টা আরও জানান, ওই লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো ধরনের কাজ করা হয়নি। পরদিন বৃস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন উপদেষ্টা।
এ বিষয়ে আকাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা নিজেই ঠিকাদারি লাইসেন্স করার জন্য আমার কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন। আমি তাকে বিষয়টি নিয়ে ছেলের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বলেছিলাম।’
জানতে চাইলে কুমিল্লা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন বলেন, ‘লাইসেন্সটির জন্য উপদেষ্টা মহোদয়ের বাবা নিজেই এসেছেন। উনার আবেদনের প্রেক্ষিতেই আমরা লাইসেন্স ইস্যু করেছি। তবে লাইসেন্সটি ব্যবহার করে কোনো ঠিকাদারি কাজ করা হয়নি। আমরা বৃহস্পতিবার দুপুরে লাইসেন্সটি বাতিল করে দিয়েছি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, ‘একজন উপদেষ্টার বাবা হিসাবে ঠিকাদারি লাইসেন্স নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। তাছাড়া উনি একজন প্রধান শিক্ষক। তিনি সমালোচনার কাজ করেছেন।’
কুমিল্লার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, উপদেষ্টার বাবা একজন শিক্ষক। উনি না বুঝে সেটা করেছেন- মানুষ এটা মেনে নেবে না। তাছাড়া আমাদের দেশে এটা একটা কালচারে পরিণত হয়েছে। কেউ ক্ষমতায় থাকলে তাদের আত্মীয়স্বজন নানাভাবে সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ খোঁজেন। আমরা মনে করেছিলাম ৫ আগস্টের পর সব সেক্টরে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এ ধরনের কিছু কর্মকাণ্ডে জনমনে নানা সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে।
সূত্রঃ যুগান্তর