
বিশেষ প্রতিনিধি:
এক সপ্তাহেও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ভিসি – প্রো-ভিসির শুন্য পদে কেউ যোগ দেন নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও আমরণ অনশননের মুখে গত ২৪ এপ্রিল বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও প্রো-ভিসি অধ্যাপক এস কে শরীফুল আলম পদত্যাগ করেছেন। সেই থেকে ভিসি ও প্রো-ভিসির পদ দুটি শুন্য রয়েছে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ভিসি ও প্রো-ভিসি পদে কেউ যোগ দিতে ইচ্ছুক নন। সূত্র বলছে, এর মধ্যে একাধিক সিনিয়র শিক্ষককে ভিসি পদে যোগ দিতে শিক্ষা উপদেষ্টা স্বয়ং অনুরোধ করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এদিকে পদত্যাগের পরেও ভিসি তার বাসভবন ত্যাগ করেন নি।
অন্য দিকে, কুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ সংক্রান্ত তাদের বিবৃতি আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে।
তবে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এই প্রতিবেদককে বলেছেন, সব কিছু নিয়েই এই বিবৃতি দেয়া হয়েছিলো। মূলত আমাদের অবস্থান ব্যখ্যা দিতেই এই বিবৃতি দেয়া। নতুন ভিসি যোগ দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান সবার কাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষার্থে শিক্ষক সমাজ পূর্বের মতোই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাবে, এমন দাবি তার।
জানা গেছে, একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভিসি ও প্রো-ভিসি এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। কিন্তু সেটাও করা হয় নি। তেমন কাউকে এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। কেউই দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নন।
সূত্র বলছে, মূলত একটি ছাত্র সংগঠনের লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দূরত্ব গড়ে ওঠে। ১৮ ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা হলে ভিসি সেদিন অভিভাবক সুলভ আচরণ থেকে সরে গিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতার দায়িত্ব পালন করলে শিক্ষার্থীরা ফুসে উঠে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদায়ী ভিসি একটি দলের হয়েই মাঠে নেমেছিলেন। সেদিন যদি তিনি নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে তাকে এমন অপমানজনক ভাবে বিদায় নিতে হতো না। কুয়েটে এর আগেও ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন হলেও এবারই প্রথম ছাত্ররা আন্দোলন করে ভিসি তাড়াতে সফল হয়।
জামাত- শিবির আন্দোলনের নেপথ্যে ছিলো এমন প্রশ্নের উত্তরে আন্দোলন ও আমরণ অনশনে অংশ নেয়া একাধিক শিক্ষার্থী অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমকে বলেছেন, এটা দেশের অন্যতম অরাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ।
এমনকি ৫ আগস্টের পরে বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন যা পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপে সেদিনই তারা কমিটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ আমলের মতো কথায় কথায় জামাত শিবিরের দোহাই দিয়ে মূল বিষয় আড়াল করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, আমেরিকা থেকে উড়ে এসে তিনি ভিসি দায়িত্ব নিয়েছেন। আওয়ামী দু:শাসন তিনি এখানে দেখেন নি বা সেই সময়কার পরিস্থিতি তিনি ফেস করেন নি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে তিনি অন্যতম বেনিফিশিয়ারি৷ যার কারণে তিনি ভিসি পদে যোগ দিয়েই তিনি নিজেকে আন প্যারালাল হিসাবে গড়ে তোলেন। একটি দলের ছত্রছায়ায় তিনি বড় ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। যা তার পেশার সাথে ম্যাচ করে না৷ বরং তিনি নগ্নভাবে নিজেকে একজন দলের কর্মী হিসেবে জাহির করেছেন৷
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিনি এর আগেও একটি দলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ভিসি হিসাবে যোগ দিয়েই তিনি সেই দলকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন, আলাপকালে এসব তথ্য যোগ করেন ছাত্ররা। ভিসি হিসাবে যোগদান করেই একচেটিয়া ব্যাটিং করেছেন। টেন্ডার ও নিয়োগ বানিজ্যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে তিনি বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছেন, অভিযোগ ছাত্রদের।
ছাত্ররা বলেছেন, ভিসি হিসাবে যোগ দিয়েই তিনি শতাধিক লোককে চাকুরি দিয়েছেন, তারা কারা, কোন দলের সদস্য, কাদের রেফারেন্সে চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন, এসব খোঁজ নেয়া হোক। এসব নিয়োগ বাতিলের দাবি ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের।
সূত্র বলছে, বিদায়ী ভিসির আমলে এখানে এর মধ্যেই অর্ধশত কোটি টাকার উপরে টেন্ডারের কাজ হয়েছে। এই কাজ কে কে করছে, সেটা একটু খোঁজ নেয়া হোক। কিভাবে টেন্ডার হয়েছে, সেটা তদন্ত হোক। আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কি কোন ঠিকাদার নেই, কেন একজন ঠিকাদারকে দিয়ে সব কাজ করাতে হবে? প্রশ্ন ছাত্রদের।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আমলে একজন লিংকন এখাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। আজ লিংকনের জায়গায় কে সব কাজ করছেন, কিভাবে করছেন, সেটা তদন্ত করা হোক। ছাত্ররা এই ব্যাপারে বিদায়ী ভিসির যাবতীয় অপকর্মের তদন্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জানা গেছে, বিদায়ী ভিসির সব অপকর্মের ফিরিস্তি ছাত্ররা লিফলেট আকারে দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। ছাত্ররা আরও অভিযোগ করেছেন, নয়া ভিসি যোগ দেবার পরে কি করেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা। নতুবা আবারও আন্দোলনে নামবে শিক্ষার্থীরা।
শেখ হাসিনার সাথে ভিসিকে উদাহরণ টেনে কুয়েটের সিনিয়র এক শিক্ষার্থী আক্ষেপের সুরে বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন কিন্তু তার দোসররা এখনও বহাল। আমাদের বিদায়ী ভিসির অবস্থাও তেমন। তিনি পদে নেই অথচ তার দোসররা সবাই এখনও বহাল। বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও বিভিন্ন ডিন পদে বিদায়ী ভিসির লোকেরা এখনো বহাল। ভিসি বরং তিনি তারিসরের ছবি আমরা ফেসবুকে দেখেছি নিজেও এখনও তার বাসভবন ছাড়েননি, অভিযোগ ছাত্রদের।
ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে তার বিদায় হলেও তার ( ভিসি) মধ্যে কোন অনুতাপ, অনুশোচনা, কোন দু:খবোধ নেই। তিনি রিসোর্টে গিয়ে অবসর সময় কাটাচ্ছেন, এমন ছবি আবার ফেসবুকেও এসেছে। অনেকটা রোম পুড়ছে, আর নিরো বাঁশি বাজাচ্ছে এমন ঘটনার মতো। রিসোর্টে অবসর নেয়ার সময় সেদিনও ছাত্ররা হামলার শিকার হয়েছে অথচ তিনি শিক্ষক হিসেবে এতটুকুন খোঁজ নেন নি।
আমাদেরকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলা করলেও তিনি একজন শিক্ষক হিসাবেই সেই ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেননি। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মামলা করার নিয়ম থাকলেও এর আগে একজন সিকিউরিটি কে দিয়ে মামলা করিয়েছেন, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ভবিষ্যতে সেই সিকিউরিটি চাকরি ছেড়ে দিলে মামলার ভবিষ্যত কি সেটা নিয়েও সন্ধিহান শিক্ষার্থীরা৷