
অনলাইন ডেস্কঃ
তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লংমার্চে বাধা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান নিক্ষেপে লংমার্চ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কাকরাইল মসজিদ এলাকা।
এতে কমপক্ষে শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী-সাংবাদিক আহত হয়েছেন এবং ২৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় কাকরাইল মসজিদের সামনে পূর্বঘোষিত লংমার্চে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে।
আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা মৎস্য ভবন মোড়ের দিকে চলে যায়। এরপর পুনরায় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
এর মধ্যে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা সেখানে অবস্থান করেন।
পুলিশের হামলায় আহত জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় পুলিশের বিচার করতে হবে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে অবস্থান নিয়ে ‘ভুজুংভাজুং বুঝি না, লংমার্চ টু যমুনা’, রক্ত লাগলে রক্ত দে, তবু আমাদের আবাসন দে, জ্বালো রে জ্বালো আগুন জ্বালো, ‘আর নয় হেলাফেলা, এবার হবে আসল খেলা’, বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘একশন টু একশন, ডাইরেক্ট একশন’, ‘জবিয়ান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘বৈষম্যের বাজেট মানি না মানব না’, ‘শিক্ষকদের অপমান, সইবে না রে জবিয়ান’, ‘আমার ভাই আহত কেন ইন্টেরিম জবাব দে’সহ বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দেয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের ২০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। আর যমুনার সামনে যাওয়া বা সেখানে অবস্থান-সমাবেশ করার কোনো সুযোগ নেই।
গতকাল বিকাল ৪টায় ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার। উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমিন, প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজ্জামুল হক ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাতে যান। এর আগে পূর্ব ঘোষিত তিন দফা কর্মসূচি উপলক্ষে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দল ও শিক্ষক সমিতির নেতারা। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে তিন দফা দাবিতে ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতি বাজার, বংশাল মোড় হয়ে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে এলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের বেরিকেড ভেঙে সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাই কোর্ট, মংস্য ভবন হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কেএম রাকিব বলেন, তিন দফা দাবি যতক্ষণ পর্যন্ত যমুনা থেকে লিখিত আকাওে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে এবং পরবর্তীতে ফলপ্রসূ কোনো কিছু না হলে কাল থেকে পুরো কোর্ট কাচারিসহ গোটা পুরান ঢাকা অচল করে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে। জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিক্ষক সমিতির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জবির বাজেট বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসনের বিষয়ে যথাযথভাবে উপস্থাপন করলেও ইউজিসি বরাবরের মতোই দায়সারা আশ্বাস দেয়। এই অভিযোগে ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা।