
অনলাইন ডেস্কঃ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আবারও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বিঘ্নিত করতে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। মবোক্র্যাসি, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অযোগ্যতা এবং নির্লিপ্ততা পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা গণমাধ্যমে শুধু কথাই বলছেন, বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য অতিদ্রুত সব ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে গোপালগঞ্জে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বলা হয়, গোপালগঞ্জে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ব্যর্থ’ হয়েছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব তথ্য জানান।
এ ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকসহ বেশ কজন সিনিয়র নেতা গতকাল কয়েকটি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বুধবার রাতের এ সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন অংশ নেন। বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বুধবার গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সভায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও সমর্থকদের হামলায় চার ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপি গভীর ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে। এই হামলাকে ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় স্থায়ী কমিটির সভায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সমর্থকেরা পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার জন্য ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশে আক্রমণের ঘটনা ঘটায়। এতে সরকারকে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করতে হয়। যা এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার একটি পরিষ্কার নীলনকশা। এই প্রসঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে এর সমালোচনা করে দলটি। সভায় বিএনপি নেতারা আশা করেন রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তাদের কর্মসূচি নির্ধারণ করবে, অন্যথায় গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়া হবে।
বিএনপির মহাসচিব জানান, বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয়বস্তুসহ কমিশনের অমীমাংসিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘অমীমাংসিত’ চার ইস্যু নিয়ে দলে আবারও আলোচনা হয়। এই চার ইস্যু হলো- সংসদে উচ্চকক্ষের নির্বাচনপদ্ধতি, নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য। আগামী সপ্তাহে এই বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। উচ্চকক্ষ ও নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিষয়ে শিগগিরই কমিশনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে অযৌক্তিক কোনো প্রস্তাব যেটাতে সরকার পরিচালনা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে, তাতে একমত হওয়া যায় না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আমীর খসরু : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন জাতীয় নির্বাচন আর পেছানো যাবে না। নির্বাচন পেছানো হলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। নির্বাচন বানচাল করতেই এই ষড়যন্ত্র। গোপালগঞ্জের ঘটনা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ এখনো পেশিশক্তির রাজনীতিতেই বিশ্বাস করে। জনগণের সমর্থন না নিয়ে ক্ষমতায় থাকার কারণে শেখ হাসিনা নিজেকে দানবে পরিণত করেছেন। মূলত জনগণের মাধ্যমে যে পরিবর্তন আসবে তা-ই টিকে থাকবে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গোপালগঞ্জের হামলা নির্বাচন পেছানোর নতুন ষড়যন্ত্র- ফারুক : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, এখন সবারই একটা ধারণা গোপালগঞ্জের এই হামলা নির্বাচন পেছানোর নতুন কোনো ষড়যন্ত্র কি না! গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাসাসের উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদী গণসংগীত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি অবমাননা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে অশালীন কটূক্তির প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। জাসাস আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সদস্যসচিব জাকির হোসেন, সংগীতশিল্পী ন্যানসি, যুগ্ম আহ্বায়ক আহসানুল্লাহ জনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, গোপালগঞ্জে যে আক্রমণ ও ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটা কীসের আলামত? যখনই লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনা হয়েছে তখনই একটি পক্ষ দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।