
অনলাইন ডেস্কঃ
সবার আগে আগে রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গ- নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমস্যার সমাধান করতে হবে। এগুলোয় সমস্যা রেখে তথ্য কমিশন, হিউম্যান রাইটস কমিশন, সেমিনার সিম্পোজিয়াম করে কোনো লাভ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘হিউম্যান রাইটস সার্পোট সোসাইটির’ উদ্যোগে আয়োজিত ‘১১তম মানবাধিকার সম্মেলন-২০২৫’ এ তিনি এ কথা বলেন ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবাধিকারকে সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, এটা শুধু আইন দিয়ে হবে না। সবার উপলব্ধি লাগবে, আত্মশুদ্ধি লাগবে, আমাদের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বচ্ছতা লাগবে। আমাদের সবচেয়ে আগে আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। এগুলোর সাথে সাথে যখন আমরা আইনগত পরিবর্তন করবো, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন করবো, তখন একটা সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আসতে পারে।
তিনি বলেন, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার ভয়টা চলে গেলে তখন সরকার কেমন দানবে পরিণত হয় সেটা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট আমল থেকে আমরা বুঝতে পারি। যেটার কারণে আমাদের এক হাজারেরও বেশি ছাত্র -জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্রজনতাকে চিরস্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে হয়েছে। কত কঠিন ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের তা উপলব্ধির করে সার্বিকভাবে চিন্তা চেতনার প্রয়োজন আছে। আমরা আশাবাদী থাকবো। কিন্তু আমরা যেন ইউটোপিয়ান হয়ে না যাই।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ১৩০০ এর বেশি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া জুলাই পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১৮০ জন নিহত হয়েছে। এক বছরে প্রায় ২৫০০ জনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে জুলাই ও জুলাই পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া একটা লম্বা পথ। এই সময়টুকু পাশে থাকতে হবে।
গুমের শিকার মাইকেল চাকমা বলেন, আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে পৃথিবীর আলো দেখতে পাবো।২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ছিল আমার জীবনের ভয়াবহ দিন যেদিন আমার জীবনের আলো নিভে গিয়েছিল। পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গুম করা মানে মৃত্যুর সমান। প্রায় সাড়ে ৫ বছর অন্ধকারে কেটে গেল। প্রতিটি দিন ছিল একেকটা বছরের মতো লম্বা। আমাকে তুলে নেওয়ার পর আমার পরিবার, মানবাধিকার কর্মীসহ অনেকে আমার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেছে। এক পর্যায়ে আমার পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এক সময় তারা আমার শেষকৃত্য করে নেয়। সেই অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ছি। কিন্তু এখনো প্রশ্ন রয়ে যায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে? এই বাংলাদেশে নানা জাতির বর্ণের মানুষ বাস করি আমরা যেন এক হয়ে বাস করতে পারি। আমি আশাবাদী এবং আমার ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াই এখনো চালু রেখেছি।
শহীদ নূরের বোন আফরিন আমান বলেন, নূরের বয়স ১৩ বছর। সে কী রাজনীতি বুঝতো? সে শুধু বুক ভরা সাহস আর হাতে পতাকা নিয়ে সে রাস্তায় নেমেছিল। সে বলতো অনেক বড় হবে, তাকে মানুষ এমনভাবে চিনবে যেন আমরা তার পরিচয় সবার সামনে দিতে পারি। তাকে এখন সবাই চিনে তবে একজন শহীদ হিসেবে। তার রক্ত, আত্মত্যাগ এখন আর কারো চোখে পড়ে না। মা এখনো নূরের কাপড়চোপড় ধরে কান্না করে। বাবা এখনো নূরের কবরের কাছে গিয়ে কান্না করে। এক বছর হয়ে গেলেও কোনো বিচার পাচ্ছি না। ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা পেয়েছি এই স্বাধীন দেশে এখন আমরা ক্ষমতা লড়াই আর নির্বাচনের নাটক দেখতে চাই না। আমার ভাইসহ সকল শহীদের হত্যার বিচার চাই। সেই সাথে জুলাই সনদ ঘোষণা চাই।
জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয় কার্যালয়ের (ইউএনআরসিও) জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী মো. নূর খান, দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ একরামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্য এবং বিভিন্ন সময় গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।