
অনলাইন ডেস্কঃ
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি (পর্যায়-২)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে। যদিও প্রকল্পটি যখন প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল, তখন নাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি’। তবে সরকার পতনের পর প্রকল্প থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি। আশ্চর্যের বিষয়, প্রকল্প থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দেওয়া হলেও ফিল্ম সিটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি (পর্যায়-২)’ শীর্ষক প্রকল্পে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৫০৬ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ৩ বছর ৬ মাস মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের কবিরপুরে ১০৫ একর জমিতে দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ হবে অত্যাধুনিক শুটিং স্পট, ফ্লোর, পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিও, কেবল কার, ঝর্ণা, ইকোপার্ক, কটেজ, এমনকি পর্যটকদের জন্য বিনোদন ব্যবস্থা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১৭ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। যদিও অর্থনৈতিক সংকটে পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রথমে ছোট পরিসরে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দিলেও, সেই পর্যবেক্ষণ আমলে নেয়নি উদ্যোগী মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্প শেখ হাসিনা সরকারও অনুমোদন দেয়নি।
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই রিপোর্টে পাঁচতারকা হোটেল ও কনভেনশন হল নির্মাণের প্রস্তাব থাকলেও, পরিকল্পনা উপদেষ্টা গত ২১ এপ্রিল মন্তব্য করেন, ‘প্রথম পর্যায়ে আরও ছোট আকারের প্রকল্প (যেমন পাঁচতারকা হোটেল, কনভেনশন হল ইত্যাদি বাদ দিয়ে) তৈরি করা যায় কি না, সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে চূড়ান্ত ডিপিপিতে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রকল্পের প্রথম ধাপ ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল মেয়াদে ১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়। দ্বিতীয় ধাপের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রথম ধাপের তুলনায় ২৫ গুণেরও বেশি। উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই দ্বিতীয় ধাপটি শেখ হাসিনা সরকারের শেষ মেয়াদেও অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে তোলা হলেও ঝুলে ছিল। তখন প্রকল্পের ব্যয়ও কম ছিল, তার পরও পরিকল্পনা কমিশন তখন ব্যয় কমানোর জন্য বলেছিল। অথচ সেটাকেই আরও ব্যয় বাড়িয়ে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। ১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন হলেও এর সুফল সীমিত।
শুটিং ফ্লোর ও কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হলেও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখনো বিদেশে পোস্ট প্রোডাকশন ও কালার গ্রেডিংয়ের জন্য যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিএফডিসির রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ডে সফল ফিল্ম সিটি হয়েছে মূলত বেসরকারি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগে। সরকারি অর্থে বিশাল বিনিয়োগের উদাহরণ খুব কম, কারণ চলচ্চিত্র শিল্পের আয় অনিশ্চিত ও পরিবর্তনশীল।
প্রকল্পের বিভিন্ন খাত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ’ নামে একটি খাত রাখা হয়েছে। আর এই খাতের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় অত্যাধুনিক দুটি শুটিং স্টুডিও ও ফ্লোর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ৩ হাজার বর্গমিটার আয়তনের তিনতলা পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিও এবং সমান আয়তনের তিনতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। বিনোদন ও পর্যটন আকর্ষণের জন্য স্থাপন করা হবে একটি কেবল কার, ৫০ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক, ১০ হাজার মিটার স্যুয়ারেজ লাইন এবং ফায়ার প্রটেকশন ও ডিটেকশন সিস্টেম। প্রকল্পের আওতায় আরও থাকবে বাসস্ট্যান্ড, কটেজ, বনায়ন, ঝুলন্ত সেতু, ঝর্ণা এবং একটি ইকোপার্ক।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় দাবি করা হয়েছে, এসব অবকাঠামো ও সরঞ্জাম প্রস্তুত হলে চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন ও নাটক নির্মাতারা বিদেশে না গিয়ে দেশেই আধুনিক শুটিং, পোস্ট প্রোডাকশন ও টেকনিক্যাল কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে এত টাকা খরচ করে এ প্রকল্পের কোনো প্রয়োজন নেই। এজন্যই পরিকল্পনা উপদেষ্টাও ছোট আকারে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমরাও ব্যয় কমাতে বলেছিলাম। তারা বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে ব্যয় কমাতে রাজি হয়নি।