
অনলাইন ডেস্কঃ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকেল ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে এ সভার আয়োজন করে মানবিক ও সংস্কৃতিমনা সংগঠন ‘রাবি রেনেসাঁ’।
আগস্টের পর থেকে মার্কিন দূতাবাস থেকে বাংলাদেশ পরিচালনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘আপনারা আরেকটা প্যালেস্টাইনের ওপর বসে আছেন। আপনাদের নিরাপত্তা বিকিয়ে দেওয়া দেওয়া হয়েছে। এটা বুঝতে পারছেন না; যেমন বুঝতে পারেননি ৫ আগস্টের পরে শেখ হাসিনাকেই শাসনভার দিয়েছেন। বর্তমানে যা চলে গেছে বনানীতে, আর বনানী মানে হচ্ছে মার্কিন দূতাবাসে। এ জন্য করিডরসহ নানান বিষয়ে তর্ক হলো। ফলে আপনাদের নতুন চিন্তা করতে হবে।’
এখন যারা নির্বাচন চায়, তারা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন করছে বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ খুবই কাছাকাছি। হিটলার, মুসোলিনি, শেখ হাসিনা—সবাই নির্বাচিত হয়েই এসেছিলেন। ফলে এখন যাঁরা নির্বাচন-নির্বাচন করছেন, তাঁরা ফ্যাসিবাদকেই পুনর্বাসন করছেন। কারণ, আমরা আমাদের মূল সমস্যা খুঁজছি না। আমাদের নির্বাচন ছাড়াও অনেক সমস্যা আছে। আমাদের শিক্ষা, নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মতো সংকটগুলোর সমাধান হয়নি।’
বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে উল্লেখ করে এই চিন্তক বলেন, ‘৫ আগস্টে একটা গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে। এরপর ৩ দিন সরকারবিহীন অবস্থায় ছিল। জনগণের হাতে নতুন রাষ্ট্র গঠনের ক্ষমতা এসেছিল। কিন্তু সেটা আর করতে পারল না। ৮ তারিখেই সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়ে গিয়েছিল। শেখ হাসিনার সংবিধানে চুপ্পুর হাতে শপথ করে আপনারা শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা দিয়েছেন।’
সব এখন ইজরায়েলের নিয়ন্ত্রণে উল্লেখ করে রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘অল্প কিছু কোম্পানি পুরো বিশ্বের টেকনোলজি এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলে আর কোনো রাষ্ট্র নেই। আমেরিকা বলে যেটা আছে, সেটা আসলে ইজরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ—সব এখন ইজরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশ বলেও কোনো রাষ্ট্র নেই। এখন রাষ্ট্র বলে আর কিছু নাই। এখন আছে কয়েকটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী।’
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভবিষ্যতে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন এই দার্শনিক। ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক উপস্থিতি অনেক বেশি। যদিও এখানে অপরের প্রতি অসহনশীলতা রয়েছে। তবু এটা উন্নতি করতে পারলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বোঝাপড়া বদলে যাবে। এর প্রাথমিক ধাপ হতে পারে একাডেমিক স্বাধীনতা। এটা আসলেই গণতান্ত্রিক রূপান্তরের শুরু হতে পারে।’
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন। তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশে শিক্ষায় সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয় বাংলাদেশে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন বাজেট পাচ্ছে না, কেন ভালো শিক্ষক-ছাত্র আসছে না, তা প্রশ্ন তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধিকারের রূপরেখা কীভাবে হবে, তার সঙ্গে রাষ্ট্রের কী সম্পর্ক—এই প্রশ্নও তুলতে হবে। আমাদের তথাকথিত স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যতটুকু গণতন্ত্র আছে, ছোট ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সুযোগ আরও সংকুচিত। এখানে একাডেমিক স্বাধীনতা নষ্ট হয়েছে। এটা নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র প্রয়োজন।’
সভায় কি-নোট স্পিকার হিসেবে প্রস্তাব তুলে ধরেন রেনেসাঁর সংগঠক রাবেয়া মুহিব। এ ছাড়া সভায় বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুষ্মিতা চক্রবর্তী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতারা। সূত্র: প্রথম আলো