
অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশের বারবার প্রতিবাদ সত্ত্বেও বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অব্যাহতভাবে পুশইন করায় ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ৫৬তম সম্মেলন নিয়ে সারাদেশে আলোচিত হচ্ছে। এবারের ডিজি পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধমূলক বিষয়ের পাশাপাশি পুশইনের বিষয়টি আলোচনায় স্থান পাবে।
আজ সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার দিন ব্যাপী এই সীমান্ত সম্মেলন বিজিবি সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর (বিএসএফ) একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল চার দিনের সম্মেলনে যোগ দিতে আজ ঢাকায় আসছেন। বিজিবির প্রতিনিধিত্ব করবেন ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
বিএসএফের এক বিবৃতি অনুসারে, ভারতের অগ্রাধিকারের মধ্যে থাকবে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, বাংলাদেশিদের দ্বারা তাদের কর্মীদের উপর আক্রমণ প্রতিরোধ এবং সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ। বিএসএফ জানিয়েছে যে ঢাকার আলোচনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, মাদক, অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান মোকাবেলা করা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অননুমোদিত নির্মাণ রোধের উপর আলোকপাত করা হবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময়ে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর ডিজি পর্যায়ের শেষ দফার আলোচনা চলতি বছরের ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এ বিষয়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এই সম্মেলনে বিজিবি দেশ ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।’
বিএসএফের পুশইন ও সীমান্ত হত্যা
সরকারি তথ্য অনুসারে, ভারত ৭ মে থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ২ হাজার ১৯৬ জনকে পুশইন করিয়েছে। পুশইন ২৪টি সীমান্ত জেলায় সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে সিলেট সীমান্ত দিয়ে সর্বাধিক ৫৭৫ জন এবং মৌলভীবাজার দিয়ে ২৫৪ জন পুশইন করেছে।
বাংলাদেশের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভারতে ইউএনএইচসিআরের নিবন্ধিত কমপক্ষে ৩৯ জন মায়ানমার নাগরিক এবং ১০০ জনেরও বেশি ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করেছে।
সর্বশেষ ঘটনায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ শুক্রবার বৈধ ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য একজন গর্ভবতী মহিলাসহ ছয়জন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। আটককৃতরা হলেন দিল্লির সাহেবাবাদ গ্রামের মোঃ দানেশ (২৮), তার স্ত্রী সোনালী খাতুন (২৬) এবং তাদের আট বছরের ছেলে; এবং পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার ১৬ এবং ছয় বছর বয়সী দুই ছেলে সহ সুইটি বিবি (৩৩)। সোনালী আট মাসের গর্ভবতী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মতিউর রহমান বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে যে বাংলাদেশি সন্দেহে ২৪ জুন দিল্লির কালীমাতা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। পরের দিন বিএসএফ তাদের কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে। তারা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতে থাকে।
বিজিবি সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নির্দেশিকা, ২০১১ সালের দুই দেশের সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং পূর্ববর্তী ডিজি পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে পুশইনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সম্প্রতি ভারতের অব্যাহতভাবে পুশইনের বিষয়টি সীমান্ত সম্মেলনে আবারও জোরালোভাবে উত্থাপন করা হবে।
সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের- বিষয়টিও সম্মেলনে অগ্রাধিকার পাবে। কারণ ভারত কর্তৃক হতাহতের সংখ্যা কমাতে এবং সংযম বজায় রাখার জন্য পূর্বে আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সীমান্তে বারবার হত্যার ঘটনা ঘটছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (অঝক) অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে বিএসএফের গুলিতে কমপক্ষে ১৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ে ১৬ জন ছিল। ২০২৪ সালের পুরো সময়কালে এই সংখ্যা ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিজিবি সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে নির্মাণ, অননুমোদিত অবকাঠামো, নদীর তীর রক্ষা, অভিন্ন নদীর জলের ন্যায্য বণ্টন এবং ভারতীয় মিডিয়াতে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণার কারণে সৃষ্ট উত্তেজনা হ্রাস সম্পর্কিত বিষয়গুলিও উত্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে।
বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে ডিজি-স্তরের সম্মেলনটি প্রায় পাঁচ দশক ধরে চলে আসছে এবং সীমান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক ফোরামগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতের পক্ষে বিএসএফের তৎকালীন ডিজি অশ্বিনী কুমার ও বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমানে বিজিবি) ডিজি মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।