
অনলাইন ডেস্কঃ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকে তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় হামলায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে বাসার দারোয়ান কর্তৃক মারধরকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন। তবে ক্লাস চলবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য শাটল ট্রেন নিয়মিত সূচি অনুযায়ী চলবে।
শনিবার রাতে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে (চমেক) পাঠানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই শিক্ষকও আহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
আহতদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. টিপু সুলতান বলেন, আনুমানিক প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ৩-৪ ধাপে চমেকে ২৪ জনকে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিচ্ছেন আমরা সব হিসেব করতে পারিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, সাফিয়া রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বাসায় ফিরলে গেট বন্ধ পান। একাধিকবার ধাক্কা দেয়া সত্ত্বেও গেট খোলা হয়নি। পরে তার সহপাঠীরা এসে দারোয়ানকে গেট খুলতে অনুরোধ করলে তিনি তাতেও রাজি হননি। দীর্ঘক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচির পর একপর্যায়ে গেট খোলা হয়। তবে ভেতরে ঢোকার সময় দারোয়ান শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুই এত লেট করে কেন ঢুকলি?” এ সময় তিনি ওই শিক্ষার্থীকে ধাক্কাও মারধর করেন।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুরা দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। পরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিচিত সিনিয়রদের খবর দেন। তারা দারোয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করলে সে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আরও শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হন। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, পরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষও তীব্র আকার ধারণ করে এবং শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
ঘটনার সময় স্থানীয়দের রামদা, দেশীয় অস্ত্র হাতে ২ নং গেটে মহড়া দিতে দেখা যায়। এ সময় দুই নং গেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা থাকে প্রত্যেক বাসায় গিয়ে হুমকি দেয় স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন তারা। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাফিয়া খাতুন বলেন, “আমাদের বাসার গেট রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আজকে কাজে বাইরে গিয়েছিলাম, ১১টার দিকে ফিরে এসে দেখি গেট বন্ধ। আমি অনেকবার ধাক্কা দিয়েছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান খোলেনি। পরে গেট খুলে আমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে দু’বার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।”