
অনলাইন ডেস্ক:
শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে; সম্পৃক্ত না থেকে স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি ক্ষমতা দখল করেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেছেন, শহীদ জিয়া এমন ব্যক্তি যিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। স্ত্রী-সন্তান পরিবার রেখে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণার দেওয়ার কথাতো ছিলো শেখ মুজিবের। তিনি কারাগারের নামে সেদিন তিনি পাকিস্তানে ছিলেন।
সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিকালে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বিএনপি’র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দুদু আরো বলেন, এই দলকে (বিএনপি) শেখ হাসিনা নির্যাতন করেছে, নিপীড়ন করেছে, হয়রানি করেছে; প্রায় ১০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। যে মুজিব যেমন ৭২-৭৫ সালে ৪০ হাজার-৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। আর শহীদ জিয়া ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি এদেশকে বিশ্বে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
বিএনপির এই নেতা নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে। এমন কোন শক্তি নেই যে নির্বাচন বন্ধ করতে পারে। বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন ষড়যন্ত্র হতে দেবো না। বাংলাদেশের মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। পছন্দের মানুষকে নির্বাচিত করবে। তারেক রহমানের নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচনে জয়ী হবে বিএনপি। বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমানকে চায়। এজন্য স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রতিবেশী দেশে হত্যাকারী-লুটেরা স্থান নিয়েছে। এজন্য আমরা যে যেখানেই আছি না কেন আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির ৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে এ সমাবেশ প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে দলের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্থান পান।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে হেলাল বলেন, তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আকাশে যখন দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছিল, যখন আন্দোলনের প্রয়োজন অনুভব হয়েছে, তখনই জিয়া পরিবার দেশের মানুষের পাশে দাড়িয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ এ জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার যোগ্যপুত্র তারেক রহমানের নেতৃত্বে মাফিয়া রানী শেখ হাসিনা দল-বল নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। সমাবেশ পরবর্তীশোভাযাত্রা কর্মসূচি থাকলেও জনদুর্ভোগ বিবেচনায় সেটি বাতিল করা হয়।
এছাড়া কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে পরিস্কার-পরিছন্নতা কাজ করেন। মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, রেহেনা ঈসা, সৈয়দা নার্গিস আলী, এড. তসলিমা খাতুন ছন্দা, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ সাকিব রায়হানের বাবা আজিজুর রহমান, গনঅধিকার খুলনা মহানগরীর আহবায়ক বেলাল হোসেন, যুবদল নেতা ইবাদুল হক রুবায়েত, স্বেচ্ছাসেবক দলের আতাউর রহমান রনু, জাসাসের ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন নগর সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ। জিয়া ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর আমিরুল ইসলাম কাগজী উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন ওলামা দল নেতা মাওলানা ফারুক হোসেন। সমাবেশ স্থলে বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, প্যানা, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। নারী নেত্রীদের পড়নে ছিলো লাল পাড়ে সবুজ শাড়ি। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এদিকে কর্মসুচির শুরুতে নগর ও জেলা বিএনপির সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
খুলনা মহানগর বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এম নুরুল ইসলাম দাদুভাই এর কবর জিয়ারত শেষে দুপুর ১২টায় দলীয় কার্যালয়ে সকল পরলোক গমনকারী নেতাকর্মীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপি যাত্রা শুরু হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বিএনপি এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর উন্নয়ন-উৎপাদনের আধুনিক রাজনীতিকে মূলপ্রতিপাদ্য করে ১৯ দফা কর্মসূচির আলোকে যাত্রা শুরু করে দলটি।
আজকের কর্মসুচি: বিএনপির গৃহিত ৬দিনের কর্মসুচির আজ (২ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনে শহীদ হাদিস পার্কসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দ্বীপগুলোতে বৃক্ষ রোপন করা হবে। এছাড়া শহীদ হাদিস পার্কের পুকুরে সকাল সাড়ে ১০টায় এবং বেলা ১১টায় ঝিলপুকুরে মংস্য অবমুক্তকরণ কর্মসুচি পালিত হবে।