
অনলাইন ডেস্কঃ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। তবে বিলবোর্ডে প্রচার চালানো যাবে। বিলবোর্ডের আয়তন হবে সর্বোচ্চ ১৬ ফুট। একটি আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে। আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় দণ্ড বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ইসি। এতে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত এবং জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শাস্তি হিসাবে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আগের বিধান বহাল রাখা হয়েছে। এসব যুক্ত করে ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’ সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার এই সংশোধিত বিধিমালা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় আগের বেশির ভাগ বিধান বহাল রাখা হয়েছে। তবে বেশকিছু নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালায় ১৯টি ধারা রয়েছে। প্রস্তাবিত বিধিমালায় ৩১টি ধারা রাখা হয়েছে। এসব বিধিবিধানের কারণে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রচারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ইসির একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, পোস্টার না থাকায় নির্বাচনি আমেজ কমবে এবং বিলবোর্ডের কারণে নির্বাচনি ব্যয় বাড়বে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন প্রার্থীরা। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, প্রস্তাবিত বিধিমালায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে কোনো ধরনের কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারসামগ্রীতে পলিথিন, রেকসিনের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা ও সমমর্যাদার ব্যক্তি এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারে তাদের অংশগ্রহণের ওপরও বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সমিতি থেকে সংবর্ধনা নিতে পারবেন না।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে দিয়েছি। এতে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনি অপরাধে প্রার্থিতা বাতিলের ধারা আরপিওতে রয়েছে। আমরা আচরণ বিধিমালায়ও যুক্ত করেছি। বিলবোর্ড ব্যবহারে নির্বাচনি ব্যয় বাড়বে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পোস্টার ব্যবহার যেহেতু থাকছে না, বিলবোর্ড ব্যবহারের কারণে ব্যয় বাড়বে কি না-সেটা অনেকটা প্রার্থীর ওপর নির্ভর করবে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। ওই নির্বাচনের তফশিল ডিসেম্বরে ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ওই নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং এই আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করল কমিশন।
আরও জানা যায়, প্রস্তাবিত আচরণ বিধিমালায় ভোটার স্লিপ দেওয়ার প্রথাকে আইনগত ভিত্তি দেওয়া হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো প্রার্থী ও প্রতিষ্ঠান ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবে। তবে ভোটার স্লিপে প্রার্থীর নাম, ছবি, পদের নাম ও প্রতীক উল্লেখ করতে পারবে না। নির্বাচনি প্রচার ও ভোটগ্রহণের সময়ে কোনো প্রকার ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করবেন, তার বিস্তারিত রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আগে থেকেই জানাতে হবে। এতে নির্বাচনি প্রচার চালানো যাবে। এক্ষেত্রে যে ব্যয় হবে, তা নির্বাচনি ব্যয় হিসাবে ইসিতে জমা দিতে হবে। এতে ঘৃণাত্মক, কারও চেহারা বিকৃত করা এবং প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। খসড়া আচরণ বিধিমালায় এসব বিধান লঙ্ঘনের ঘটনায় সাইবার বা ডিজিটাল আইনে মামলার বিধান থাকলেও চূড়ান্ত বিধিমালায় তা রাখা হয়নি।
প্রস্তাবিত বিধিমালায় রিটার্নিং কর্মকর্তা একই মঞ্চে সব প্রার্থীর ইশতেহার পাঠের ব্যবস্থা করতে পারবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এ আয়োজন করতে পারবেন। এছাড়া আচরণ বিধিমালায় প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের আচরণ বিধিমালা মেনে চলার অঙ্গীকার করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। ওই অঙ্গীকারনামায় নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে প্রার্থীর সম্পৃক্ততা নেই প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনি অপরাধে আরপিও ৯১ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিল করে থাকে ইসি। এ বিষয়টি আচরণ বিধিমালায় স্পষ্ট করা হয়েছে।