
অনলাইন ডেস্কঃ
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ওয়ার্ডে প্রতাপশালী ছিলেন কয়েকজন কাউন্সিলর। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তাদের অনেকেই বেপরোয়া হয়ে পড়েন। বৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া, সব সময় অস্ত্র বহনের কারণে এলাকার মানুষ থাকতেন আতঙ্কে। অভ্যুত্থানের পর তাদের অনেকেই এখন পলাতক। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। কেউ কেউ জামিনে বের হয়ে এখন নীরবে বাড়িতেই দিন কাটাচ্ছেন।
এমন অবস্থায় পুরাতন অভ্যাসে অস্ত্রবাজির শখ জেগেছে তাদের কয়েকজনের। আবেদন করেছেন বৈধ অস্ত্র ফেরত চেয়ে। কিš গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছে, তাদের হাতে অস্ত্র গেলে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। নেতিবাচক মত দেওয়ায় আপাতত অস্ত্র ফেরতের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশনের ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ পিন্টু, ১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস, ২৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এস এম রফি উদ্দিন, ৩১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফ হোসেন মিঠু অস্ত্র ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন।
সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুও অস্ত্র ফেরত পেতে আবেদন করেছিলেন। গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে খুন হন টিপু। তাদের সঙ্গে অস্ত্র ফেরত চেয়েছেন ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন খন্দকার, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বুলু বিশ্বাসের ভাই ওমর ফারুক বিশ্বাস, বিতর্কিত ঠিকাদার মাহাবুব ব্রাদার্সের মালিক শেখ মাহাবুবুর রহমান, চিতলমারী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শামীম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলমগীর কবীর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গতবছর ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেওয়া সব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থগিত লাইসেন্সভুক্ত অস্ত্র ও গুলি নিকটস্থ থানায় অথবা জেলা ট্রেজারি ও আর্মস ডিলারের কাছে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে খুলনা থেকে ৫২৪ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৫২২ জন বৈধ অস্ত্র জমা দেন। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে অস্ত্র জমা না দেওয়ায় বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন এবং বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের কাজী মোমিনুল হকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অস্ত্র ফেরত আবেদন শুরু হয়। গত জুন পর্যন্ত ৩২০ জন আবেদন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সাবেক কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতা, অতীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরাও অস্ত্র ফেরত পেতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে অনেককে অস্ত্র ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিতর্কিত কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতারা কেউ অস্ত্র ফেরত পাননি।
এলাকাবাসী জানান, অস্ত্র ফেরত চাওয়া ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ পিন্টু ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতা ছিলেন এবং ১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০১৮ সালে তারা দু’জন বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরমধ্যে আনিস বিশ্বাষ মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ পান। তালুকদার আবদুল খালেকের আশীর্বাদ নিয়ে ঠিকাদারি, বালুর ব্যবসা করে এলাকায় দাপটের সঙ্গে ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর সুলতান মাহমুদ পিন্টুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। একাধিক মামলার আসামি হয়ে তিনি বর্তমানে জেলে রয়েছেন। তবে চাচা খালিশপুর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বিশ্বাসের কারণে জেলে যেতে হয়নি আনিস বিশ্বাসকে।
কয়েকটি মামলা হলেও তিনি প্রকাশ্যেই রয়েছেন। ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ৩১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফ হোসেন মিঠু। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েও তিনি এলাকায় সুবিধা করতে পারেননি। এর মধ্যে পলিথিন পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদ করায় সাবেক এমপি ও একটি বাহিনী প্রধানের বোন রুনু রেজার চক্ষুশূল হয়ে জেলে যেতে হয় তাকে। আওয়ামী লীগের সময় দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও তিনি একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন মিঠু।
আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত প্রদান সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি ওই জেলার খুলনার জেলা প্রশাসক। খুলনার জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুল ইসলাম নতুন যোগদান করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত নন। এই শাখার এক কর্মকর্তা জানান, আবেদন করলেই অস্ত্র ফেরত পাবেন-এমন ভাবার অবকাশ নেই। আবেদনগুলো পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার, গোয়েন্দা সংস্থার কাছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিতর্কিতদের অস্ত্র ফেরত পাওয়ার সুযোগ কম।
সূত্র জানায়, সাবেক ৫ কাউন্সিলরের অস্ত্র ফেরতের বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার। তাদের হাতে অস্ত্রের অপব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করার কারণে আপাতত তারা অস্ত্র ফেরত পাচ্ছেন না।