নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই কক্সবাজারের রামুতে নৈরাজ্য চালাচ্ছে জেলা যুবদল নেতা জাবেদ ইকবাল ও তার সহযোগীরা। অভিযোগ উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা বাণিজ্য চালাচ্ছেন এই নেতা।
তার মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে সোমবার (৭ অক্টোবর) কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী উম্মে আলীয়া সুলতানা বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আমরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কিন্তু সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট প্রথমে আমাদের পরিবারে হামলা করে জাবেদ ইকবাল গ্যং। এ জন্য তো আমরা আন্দোলন করিনি। দখলবাজ, মামলাবাজ যুবদল নেতা জাবেদ ইকবালের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগীদের একজন হোসাইন শরিফ বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপির নাম ব্যবহার করে কক্সবাজার জেলা যুবদল নেতা জাবেদ ইকবাল, তার ভাই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবছার কামাল এবং তার বাবা রামু উপজেলা বিএনপি নেতা মোক্তার আহম্মদ মেম্বারের নেতৃত্বে দখল, মামলা ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৬টি পরিবারে হামলা চালিয়েছে তারা। টাকার বিনিময়ে আমার পরিবারসহ সাতটি পরিবারের ১৬ জনকে মামলায় জড়িয়েছে জাবেদ ইকবাল। যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের কেউ দোকানি, কেউ প্রিন্টিং প্রেস ব্যবসায়ী, কেউ প্রবাসী, কেউ আবার বেসরকারি সংস্থায় চাকরিজীবী এবং জনপ্রতিনিধি। মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আমার ভাইরা আজ ঘরছাড়া।
তথ্য বলছে, ৩০ সেপ্টম্বর কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ও রামু উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পানের ছড়া ক্যাম্পপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ড্রেজার মেশিন, একটি পাম্প, একটি ট্রলি গাড়ি, তিনটি পাইপ জব্দ করে। কিন্তু জব্দ মালামাল গোপন রেখে ৩ লাখ ঘনফুট মাটি জব্দ দেখিয়ে একটি মামলা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আওসাফুল ইসলাম (নং-০৪/২৪)। তবে মামলায় প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে এলাকায় অবস্থান করেন না এমন ব্যক্তি, প্রবাসীদের আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে ১২নং আসামি ফারুক এবং তার ভাই ১৩নং আসামি ইসমাইল দুইজনই এক দশক ধরে কক্সবাজার শহরের আছাদ কমপ্লেক্সে প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসায়ী, ৩নং আসামী আব্দু ছালাম একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থায় চাকরি করেন। ২নং আসামি করা হয়েছে ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার ছৈয়দ আলমকে। ১নং আসামি মুদির দোকানি আব্দু রশিদ (৫৫) এবং তার ছেলে ফরিদুল হককে করা হয়েছে ৫নং আসামি। ১৪ নং আসামি করা হয়েছে তার ছেলে প্রবাসী জিয়াউল হক এবং ৪ নং আসামি মুজিবুল হক একজন ছাত্র। ১৬নং আসামি ইমাম শরিফ একজন কৃষক, ১৫ নং আসামি আক্তার কামাল একজন ছাত্র। ৯নং আসামি নুরুল আবছার একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে তাদের কাছ হতে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যুবদল নেতা জাবেদ ইকবাল বিভিন্ন ভাবে তার প্রতিপক্ষ হওয়া লোকদের ঘায়েল করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের আসামি করেছে। কিন্তু দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে জাবেদ ইকবালের নেতৃত্বে অবৈধ মাটি ও বালি উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। জাবেদ ইকবাল জেলা যুবদল নেতা হওয়ার সুবাদে নিজেকে কখনো সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল এবং কখনো সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের অনুসারী দাবি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এসব অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগেও যুবদলের এ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
ইউনির্ভাসেল প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, একযুগ ধরে ছোট ভাই ইসমাইলকে নিয়ে জেলা শহরে ব্যবসা করছি, থাকি শহরেই। অথচ বালি জব্দের মামলায় আমরা দুই ভাইকে আসামি করা হয়েছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে জাবেদ ইকবাল আমাদের আসামি করেছে। মামলার ১নং আসামি রশিদ আহমদ বলেন, আমি কোনো অপরাধ করতে গেলে সঙ্গে কি সন্তানদেরও নেব? মামলায় আমি, আমার প্রবাসী ছেলে এবং ছাত্রকে আসামী করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, জীবনে কখনো পাহাড় কাটা কিংবা বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না এবং নেই। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জাবেদ ইকবাল আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করিয়েছে। মামলায় যাকে মূল সাক্ষী দেখানো হয়েছে তিনিও আমার নাম দেননি বলে জানিয়েছেন।
মূল সাক্ষী গ্রাম পুলিশ কাদের হোসেন বলেন, অভিযানকালে এসিল্যান্ড ফোনে জাবেদ ভাই বলে একজনের সঙ্গে কথা বলে সেভাবে সবকিছু করেছেন। আমি কারো নাম দিইনি। আমাকে সাক্ষী দেখালেও মামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা।
মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক আওসাফুল ইসলাম বলেন, মামলার সাক্ষী ও রামুর এসিল্যান্ডের দেয়া তালিকা মতে আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভূলে কারো নাম এলে তদন্তে দেখা যাবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত যুবদল নেতা জাবেদ ইকবাল বলেন, আমি মূল অভিযুক্তদের কাছ হতে টাকা নিয়ে আসামী পরিবর্তনে কাজ করেছি এমন প্রমাণ থাকলে তারা (আসামিরা) আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। আসামিরা সবাই খারাপ প্রকৃতির লোক। ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মা তাড়াতে হচ্ছে আমাদের। তবে, আমি এ মামলা সম্পর্কে জানতাম নাও- দুদিন পরে জেনেছি।
রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল বলেন, অভিযানে আমরা ড্রেজার মেশিন, পাম্প, সলার সেচিচ (ট্রলিগাড়ি), ৩০০ ফিট পাইপসহ যা পেয়েছি তা জব্দ তালিকা করে সংরক্ষণ করা আছে। সাক্ষী ও অন্যভাবে যাদের নাম এসেছে তাদের যাচাই করে আসামি করার জন্য পরিবেশের কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া ছিল। তদন্ত না করে আসামি করলে সেটার দায় বাদীর। কারো কাছে প্রভাবিত হয়ে মামলার আসামি করার অভিযোগ সঠিক নয়। মামলার আসামি সংক্রান্ত সব দায় বাদী ও সাক্ষীদের।