
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দেশের বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে উজানের দিকে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও ভাটির দিকে আবার বেড়েছে। ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দি। নেত্রকোনায় গতকালও ভারি বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বাঙালি নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে একটি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার বাড়িঘর।
ময়মনসিংহ : হালুয়াঘাট, ফুলপুর ও ধোবাউড়া উপজেলায় এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দি। সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্গত এলাকায় খাদ্য সহায়তাসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছে।
হালুয়াঘাটে পৌর এলাকার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে মাটির ঘর ধসে পড়ায় অনেকেই গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি।’
ফুলপুরে বিভিন্ন ইউনিয়নের বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করছে বাসিন্দারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া ত্রাণসামগ্রী দ্রুত দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
তবে পানির স্রোতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।’
ধোবাউড়া উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘হালুয়াঘাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু ফুলপুরে পানি বাড়ছে। ধোবাউড়ায় উঁচু এলাকায় পানি কমলেও নিচু এলাকায় বাড়ছে।
নেত্রকোনা : গতকাল সকালের ভারি বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বিকেলে উবদাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া কংস, সোমেশ্বেরী, মগড়া নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও ভাটির ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সূত্র জানায়, নেত্রকোনার ২৭টি ইউনিয়নে ১৩১টি প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে ৬৫ হাজার মানুষ।
বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দির বাঙালি নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে ২০টি বাড়ি ও বসতভিটা এবং ৫০০ বিঘা ফসলি জমি বাঙালি নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে চান্দিনা নোয়ারপাড়া গ্রামের আরো পাঁচ হাজার মানুষ এবং দুই গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল।
গতকাল চান্দিনা নোয়ারপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঙালি নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। এই গ্রামের ইন্দ্র, সূর্য, প্রভাত, চন্দ্র, গৌর, দিনেশ, সুবল, নিমাইসহ প্রায় ২৫টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে বাঙালি নদীতে। এখন তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, এভাবে নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চান্দিনা নোয়ারপাড়া গ্রামের ফসল উৎপাদনের জন্য স্থাপিত বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের গভীর নলকূপটি গত কয়েক দিন আগে বাঙালি নদীতে বিলীন হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শন করে কৃষকের ফসলি জমি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’