
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জরিমানার প্রতিবাদে দুইদিন বন্ধ রেখে ঢাকার তেঁজগাওয়ের আড়তে ডিম বিক্রি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে পাশাপাশের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে আশপাশের বাজারগুলোতে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই আড়তের দোকানগুলো চালু হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে যে দরে ডিম বিক্রি হয়েছে, তাতে লোকসানের দাবি করেছেন তারা।
তেঁজগাও ডিম সমিতির সদস্য ও নাসির ট্রেডার্সের কর্ণধার মো. নাসির হোসাইন বলেন, “গত রাত থেকে ভোর পর্যন্ত আমাদের বেচাকেনা হয়েছে। এই সময়টাতে বেচাকেনা আগের মত স্বাভাবিক হলেও আমাদের প্রতি ডিমে ৩৫ পয়সা কর লস দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে।
“১২.২০ টাকা করে প্রতিটি বিক্রি করেছি। আর পরিবহনসহ কেনা পড়েছে ১২.৫৫ টাকা।”
লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রির কারণ জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “ভোক্তা (ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর) আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে, খামার থেকে ক্রয় মূল্য কমে আসবে দুইদিনের ভেতরে। আর আমরা তখন আরও কমে বিক্রি করতে পারব। আশা করা যায়, দুইদিন পর থেকে বাজারে সরকারি রেটেই ডিম পাওয়া যাবে।”
গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিমের যে ন্যায্য মূল্য বেঁধে দেয়, সেটি না খামার পর্যায়ে না খুচরায় কার্যকর হয়েছে।
উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেদিন।
এই দরের চেয়ে বেশিতে ডিম বিক্রি করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বেশ কিছু আড়তে জরিমানা করার প্রতিক্রিয়ায় রোববার রাত থেকে ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেয় তেজগাঁও ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর আড়তদাররা।
এর মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মঙ্গলবার ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন মূল্য ঘোষণা করে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার থেকে উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সায়, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সায়। খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। সে হিসেবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
তবে ডিমের দাম কমেনি, উল্টো পাড়া মহল্লায় হালি ১৮০ টাকা ছাড়িয়ে কোথাও কোথাও ১৯০ টাকা ছুঁয়ে ফেলে।আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় সরবরাহ সংকটে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
বুধবার বিকেলে তেঁজগাও ডিমের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিকআপগুলো খামারে পাঠানো হয়েছে ডিম আনতে। তবে কিছু গাড়ি সেখানেই বসেছিল।
তেঁজগাওয়ের আড়ত আল আমিন ট্রেডার্সের কর্ণধার ও তেজগাঁও ডিম সমিতির কার্যকরী সদস্য মো. আল আমিন বলেন, “গাড়িগুলো বিভিন্ন জেলার খামারে যায় ডিম আনতে। সেগুলো রাতে ১১ টার দিকে তেঁজগাও আড়তে ফিরে।”
কারওয়ানবাজারে খুচরায় ৫৫ টাকা হালি, ডজন ১৬০
কারওয়ান বাজারের খুচরায় ডিম বিক্রেতা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “আমি বিক্রি করতেছি ১৬০ টাকা ডজন করে। আর হালি হইল ৫৫ টাকা। গতকাল তো ডিম ছিল না। সব ক্রেতারা ঘুইরা গেছে।”
এই বাজারে সাদা ও লাল ডিম একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
আরেক বিক্রেতা মো. রাসেল বলেন, “লালের চেয়ে সাদা একশ ডিমে মাত্র দশ টাকা কম পাইকারিতে। খুচরায় তো আলাদা দামে বিক্রি করার সুযোগ নাই।”
বুধবার ভোরে তিনি আড়ত থেকে একশ লাল ডিম ১ হাজার ২৫০ টাকায় আর সাদা ডিম কিনেছেন ১ হাজার ২৪০ টাকায়।
ডিম ১২.৫০ টাকায় কিনে ১৩.৭৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে তেজগাঁও আড়তের পাশের খুচরা বিক্রেতা মো. আরিফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “মাঝেমধ্যে দেখা যায় ডিম ভাঙা থাকে, আবার এনে নাড়াচাড়া করতে গেলেও ভেঙে যায়। সেসব তো আর ভাল ডিমের সাথে বিক্রি করা যায় না। কমে বিক্রি করতে হয়। তাই কিছুটা দাম না বাড়ালে লাভ থাকে না।”