
স্পোর্টস ডেস্কঃ
প্যারিসের তিয়েখঁ দু শাতেলে অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে জর্জ উইয়াহ যখন বহুল প্রতীক্ষিত বালন দ’র ২০২৪ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, মঞ্চের সামনে থেকে সেসময়ও কয়েকজনের মুখে ভিনি ভিনি চিৎকার ভেসে এল। অবশ্য নামটা গত কয়েকমাস জুড়েই বালন দ’রের সঙ্গে চর্চিত হয়েছে। গতকালের আগ পর্যন্ত ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের হাতেই ব্যক্তিগত সেরার এ পুরস্কার দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু পুরস্কার বিতরণীর কয়েকঘণ্টা আগে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার নয়, এবারের বালন দ’র জিততে যাচ্ছেন রদ্রি!
এটি এখন আর গুঞ্জন নয়। উইয়ার কণ্ঠে ম্যানচেষ্টার সিটির স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের নামই ঘোষিত হয়েছে বালন দ’র ২০২৪ বিজয়ী হিসেবে। আর এতে বালন দ’রে স্পেনের দীর্ঘ ৬৪ বছরের খরা কেটেছে। আলফ্রেদ ডে স্তেফানো (১৯৫৭ ও ১৯৫৯) ও লুইস সুয়ারেসের (১৯৬০) পর মাত্র তৃতীয় স্প্যানিশ হিসেবে ব্যক্তিগত এ সেরার পুরস্কার জিতলেন রদ্রি। পাশাপাশি ১৯৯০ সালে জেতা লোথার ম্যাথিউসের পর এবারই প্রথম বালন দ’র উঠল কোনো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের হাতে।
তা রদ্রি কি হুট করে এসে বালন দ’র বাগিয়ে নেওয়া কেউ? যারা ফুটবল নিয়মিত দেখেন, তারা অন্তত জানেন, গত কয়েক মৌসুম ধরেই স্পেন ও সিটির মধ্যমাঠের জ্বালানি হিসেবে কাজ করছেন রদ্রি। রক্ষণভাগ ও আক্রমণভাগের মধ্যে সেতু বন্ধন স্থাপনের কাজটাও করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। বল পায়ে যেমন নীচ থেকে খেলা গড়েন, তেমনি প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলানোর দায়িত্বটাও পালন করেন অনায়াসে। আবার বল হারালে দ্রুত নিচে প্রতিপক্ষের থেকে বল কেড়ে নিয়ে আবারও আক্রমণ… দিনের পর দিন এটাই করে চলেছেন রদ্রি।
একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও গত মৌসুমে ৬৩ ম্যাচ খেলে ১২ গোল করেছেন রদ্রি, করিয়েছেন আরও ১৪টি। শতকরা ৯৩ ভাগ সফল পাস দিয়েছেন। ১১টি বিগ চান্স ক্রিয়েট ছাড়াও কী পাস দিয়েছেন ১০০টি। আর রদ্রির এমন পারফরম্যান্সে ভর করে সিটি জিতে নিয়েছে টানা চতুর্থ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। এ ছাড়া জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। সে পথে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটাও উঠেছে রদ্রির হাতে।
ইউরোর পর স্পেনের কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে তো সে সময়ই বলেছিলেন, পারলে রদ্রির হাতে এখনই বালন দ’র দিয়ে দেওয়া যায়। আবার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার মতে, রদ্রিই এখন বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার। সেরা ‘মিডফিল্ডার’ ছাপিয়ে রদ্রি গত মৌসুমের সেরা হিসেবে ঘোষিত হওয়া তাই মোটেও অবাক করার মতো নয়।
রদ্রি এতোদিন ছিলেন পর্দার পেছনের হিরো। পেছন থেকে খেলা গড়েছেন, খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু নিজেকে পুরোপুরি আড়ালে রাখতে পারলেন না। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০০ দেশের একজন করে নির্বাচিত সাংবাদিকের ভোট ঠিকই রদ্রিকে সেরা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে রদ্রি এ পুরস্কার উৎসর্গ করলেন স্প্যানিশদের, ‘আজকের এ ‘বালন দ’র’ জয় শুধু আমার নয়। এটা স্প্যানিশ ফুটবলের তাঁদের সবার জন্য, যাদের এটা প্রাপ্য ছিল, কিন্তু কখনো জেতা হয়নি।’ কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেছেন ২৮ বছর বয়সী সিটি মিডফিল্ডার, ‘যেমন (আন্দ্রেস) ইনিয়েস্তা, শাভি (এরনান্দেস), ইকার (ক্যাসিয়াস), সের্হিও বুসকেতস, এবং আরও অনেকে… এটা স্প্যানিশ ফুটবল এবং বিশেষ করে মিডফিল্ডারদের জন্য।’
রদ্রি যোগ করেন, ‘আজ অনেক বন্ধুই আমাকে বার্তা পাঠিয়েছে যে, ফুটবলে মিডফিল্ডারদের কাজ যেভাবে আড়ালে পড়ে, এ বালন দ’রের মাধ্যমে সেটি সামনে নিয়ে আসায় আজ ফুটবল জিতেছে।’
বালন দ’রের পুরস্কার হাতে রদ্রি আরেকটা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করেন। তাঁর কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নেই বলেও জানান সিটির ২৮ বছর বয়সী এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। রদ্রির ভাষায়, ‘আমার নিজের, পরিবার ও দেশের জন্য আজকের দিনটি খুব স্পেশাল। আমি সেটা বুঝতে পারি, কারণ আমার কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট নেই। মানুষজন আমাকে খুব বেশি চেনেন না। আমি একজন সাধারণ মানুষ মাত্র। এটা (ফুটবল) আমার পেশা আর আমি খেলাটা উপভোগ করি। আমি সবসময়ই একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি।’
তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নেই বলে মানুষ চেনেন না বলে রদ্রি যে দাবি জানালেন, তা সম্ভবত আর প্রয়োজন নেই। রদ্রির হয়ে কথা বলেছে তাঁর পারফরম্যান্স। আর যে পারফরম্যান্সের জেরেই বিশ্ব আজীবন মনে রাখবে, ২০২৪ বালন দ’র উঠেছিল এক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের হাতে।