
শাহীন রহমান
গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার সাথে থাকা ভিন্ন দল ও মতের অর্ধ শতাধিক নেতা ভাগ্য বিপর্যয়ে পড়েছেন, তারা রীতিমতো বেকার হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, এরা প্রত্যেকেই বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ভাজন বা মিত্র দল হিসাবে ১৪ দল বা নির্বাচনে অন্যতম সহযোগী ছিলেন। কম বেশি গত সংসদে ছিলেন। বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, এইসব দল ও নেতারা শেখ হাসিনার দোসর ছিলেন। এরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছেন।
শেখ হাসিনার ভোটার বিহীন সরকারকে বৈধতা দিয়েছেন। এ কারণে এসব নেতারা এখন অলিখিত কালো তালিকাভুক্ত হয়ে আছেন। অধিকাংশই পলাতক আছেন। ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত সাবেক মন্ত্রী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ইতমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। শুধু শেখ হাসিনার কারণেই জাতীয় পার্টির সাবেক এমপিরাও পলাতক আছেন।
নেতা কর্মীদের মধ্যে বেকার হয়ে বসে আছেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির দুই অংশ। নির্বাচন প্রশ্নে জিএম কাদেরের সাথে মতের মিল না হওয়ায় এবং সিট ভাগাভাগি না মেলায় রওশন এরশাদ, কাজী ফিরোজ রশিদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলারা নির্বাচনে অংশ না নিলেও বা না করলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতার কারনে তাদেরও কপাল পুড়েছে।
এই অংশের নেতা, প্রয়াত এরশাদ ও জিএম কাদেরের প্রেস সেক্রেটারি, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনিল শুভ রায় নিজেও রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা কথা স্বীকার করে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, রাজনীতি করার মতো পরিবেশ, পরিস্থিতি নেই। রাজনীতি থেকে সৌন্দর্যবোধ, পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা- শালীনতা, সহমর্মিতা একেবারেই উঠে গেছে। বিদায়ী সরকার রাজনৈতিক চর্চা, গণতন্ত্রকে একেবারে ধ্বংস করে গেছেন, যার সবচেয়ে বড় শিকার জাতীয় পার্টি।
সুত্রমতে, রওশন এরশাদ বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। রওশনের কারণে আবু হোসেন বাবলা, কাজী ফিরোজ রশি প্রমুখ নেতারা মূলধারার জাতীয় পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসে আছেন। এরা সবাই বর্তমানে আত্মগোপনে। একরকম সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন। একইভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের রোশনালে পড়ে রাজনীতিকে সামগ্রিক অর্থেই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন।
১৪ দল ভুক্ত হাসানুল হক ইনুর জাসদ, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি, জেনারেল ইব্রাহিমের নেতৃত্বে কল্যাণ পার্টি, মেজর শমসের মুবিন এবং অ্যাডভোকেট তৈমুর আলি খন্দকারের নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপি, শাহ মোহাম্মাদ আবু জাফরের কিংস পার্টি, তরিকত ফেডারেশনের নেতারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রোষানলে পড়েছেন। এই তালিকায় আরও আছেন সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মনসুর, দিলীপ বড়ুয়া, কাদের সিদ্দিকীর দল,, প্রয়াত বি চৌধুরীর বিকল্পধারা, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি। এই নেতারা তাদের তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন পর্যন্ত জানেন না, এদের মধ্যে কল্যান পার্টির জেনারেল ইব্রাহিম, বিকল্প ধারার মাহি বি চৌধুরী গত সংসদে ছিলেন। রাজনীতিতে এমন বিপর্যয় এসব নেতারা এর আগে পড়েননি।