
স্পোর্টস ডেস্কঃ
পাকিস্তান সিরিজের পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেন জিততেই ভুলে গেছে। ভারতের পরে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং এবার আফগানিস্তান সিরিজে একই ব্যর্থতা। প্রথম ওয়ানডে হাতের মধ্য থেকেও ফসকে গেছে কেবল ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে। বিষয়টি ভালো লাগেনি বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। তিনি জানিয়েছেন হতাশার কথা। আবার সমাধানের কথাও বলেছেন। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই সমস্যা সমাধানের উপায় দেখিয়ে আসছেন।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। তবু ধৈর্য্য রেখে নিজের চিন্তা-চেতনা জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে। আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ‘আমি এসিসি আইসিসিতে গেল ১৮ বছর ধরে কাজ করছি ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। আমার প্রধান কাজ হচ্ছে, এশিয়ার সব দেশে ক্রিকেটের উন্নয়ন। আজকে যে আফগানিস্তান দেখছেন, তাদের শতভাগ কোচই আমাদের হাতে তৈরি করা। ৯৯ ভাগ নয়, শতভাগ। আমি আইসিসি থেকেও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারি। আমি সেই লক্ষ্যেই তাকিয়ে আছি, আমার কাছে বাংলাদেশ সহায়তা চাইবে কখন। আমি সেই আশায় তাকিয়ে আছি।’
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান দেশের ক্রিকেটের জন্য কেবল কাজটাই করতে চান। সেখানে অর্থের ব্যাপারটি তার কাছে মুখ্য নয়। বলেছেন, ‘টাকা কখনই বড় ব্যাপার না, বাংলাদেশটা বড় ব্যাপার। যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট থাকে তাহলে আমরা থাকব। সুতরাং এখানে পয়সাটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার না।’
বিসিবির সভাপতি কিংবা পরিচালক হওয়ার বিষয়ে বুলবুল বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পরে যে পরিবর্তনটা আসল তখন কিন্তু আমার সঙ্গে সরকার থেকে যোগাযোগ করেছিল এবং আমার কাছে কিছু দিকনির্দেশনা চেয়েছিল। একদম পরিষ্কারভাবে আমি আমার আইডিয়াগুলো শেয়ার করেছিলাম। সেগুলো প্রতিফলিত হয়নি, হয়তো ভবিষ্যতে হবে। কোনো বড় পদবি না, আমি সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করতে চাই।’
ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমাদের বড় সমস্যা হলো ক্রিকেটটা ঢাকা কেন্দ্রিক। আমরা যদি সেটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারতাম উপজেলা থেকে জেলা, জেলা থেকে বিভাগ এবং সেখানে যদি একাধিক দিনের ক্রিকেট চালু করতে পারতাম তাহলে ২৪ বছর পরে এই অবস্থান থেকে অনেক ভালো হতে পারত।’
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আইসিসির কর্মকর্তা বুলবুল বলেছেন, ‘এই নভেম্বরে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ২৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে আমরা তেমন ম্যাচ জিততে পারিনি। গেল কয়েকটা র্যাংকিং ও দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলো দেখলে বোঝা যায়, আমরা তেমন ভালো করতে পারিনি। এর অন্যতম কারণ আমাদের যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট রয়েছে এখনো সেটি বনভোজনের মতো হয়। এখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চলছে, কতজন জানেন সেটি? আমি খুব খুশি হতাম যদি আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটা ডে-নাইট করতে পরতাম। কয়দিন আগে বলেছিলাম, ডে-নাইট হলে আমরা দর্শক আকৃষ্ট করতে পারি। স্টেডিয়ামগুলো নতুনভাবে ব্র্যান্ডিং করা উচিত। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারিশ্রমিকটা তিনগুণ করে দেওয়া উচিত। বিপিএল যেভাবে প্রচার-প্রসার করি, সেভাবে এই ক্রিকেটকে করতে পারলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ভালো হয়ে যেত। তাতে টেস্ট ক্রিকেটও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভালো হয়ে যেত।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে হতাশ বুলবুল। এই বিষয়ে বলেছেন, ‘ক্রিকেট খেলাটা এতো জনপ্রিয় বাংলাদেশে যে, আমাদের ১৮ কোটি মানুষ আছেন, সবাই ক্রিকেটকে ভালোবাসেন। যেহেতু বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সবাই ভালোবাসেন, এই ভালোবাসাটা কিন্তু সারা জীবন থাকবে না। যদি আমরা আমাদের ফ্যানবেজ ধরে রাখতে না পারি, এর মূল কারণ আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমাদের সব কিছুতে সবাইকে আরো সম্পৃক্ত করা উচিত। স্কুল ক্রিকেট, কলেজ ক্রিকেট, মেয়েদের ক্রিকেট, এই জায়গাগুলোতে আমার মনে হয় তেমন একটা কাজ করিনি আমরা। এই মুহূর্তে হয়তো দেখা যাচ্ছে, এটা খুবই জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু জানি না, এভাবে যদি ১০ বছর চলতে থাকে, তাহলে হয়তো আরেকটা খেলা আমাদের জায়গা দখল করে নেবে।’