
বিশেষ প্রতিনিধি:
দেশের অন্যান্য জায়গার মতো খুলনা জেলাতেও আওয়ামী লীগের অবস্থা এই মুহুর্তে বেশ করুন। বিশেষ করে জেলার নেতাদের মধ্যে সরকার পতনের পরে বেশ সমন্বয়হীনতা চলছে।
৫ আগস্টের পরে সদ্য বিদায়ী ক্ষমতাসীন দলের জেলার শীর্ষ দুই নেতা আত্মগোপনে থাকায় এই সমন্বয়হীনতা আরও বেশি প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। এই দুই নেতাই দল ক্ষমতাসীন হবার সুবাদে পলিটিক্যালি চেয়ার, মর্যাদা পেয়েছেন কামিয়েছেন অজস্র টাকা।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতনের পরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুন তার ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে রাতারাতি হাওয়া হয়ে যান। একই অবস্থা দলের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারীর ক্ষেত্রেও। তিনি এই মুহুর্তে কোথায় আছেন, কেউ জানে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বের হয়েছে, তিনি কারাগারে আছেন, সুজিত নিজেও এমন সংবাদের প্রতিবাদ করেন নি।
দলের অনেকেই বলেছেন, তিনি বাইরে আছেন, কিন্তু যারা তার স্বপক্ষে বলেছেন তিনি বাইরে আছেন, তারা কেউই সেটা পরে প্রমান করতে পারেন নি। বরং এর মধ্যে গত রোব্বার তার তিন তিনটা মামলার জামিন ; মামলা জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে এসেছিলো।
গত ১০ নভেম্বর বিচারপতি আসাদুজ্জামানের একক বেঞ্চে পুরান ১৫ নম্বর কোর্টে এডভোকেট সুজিতের ৩ মামলার জামিন নামঞ্জুর হয়। ১৪৫ তালিকায় মামলার সিরিয়াল ছিলো ১৪০, ১৪১, ১৪২
আদালত সুত্র বলেছে, আগাম জামিন নিতে গেলে আসামিকে ফিজিক্যালি হাজির হয়ে জামিন নিতে হয়। কিন্তু সুজিত সেদিন আদালতে হাজিন হন নি।
খুলনা বারের সাবেক এক নারী পিপি প্রথম সময়কে বলেছেন, আদালতে দেয়া পেপারস মতে এডভোকেট সুজিত জেলে আছেন। সুজিত অধিকারীর জেলে থাকার খবর তার পরিবার, রাজনৈতিক সহযোগীরা অস্বীকার করলেও তিনি জেলে নাই, এটাও প্রমান করতে পারেননি। অন্যদিকে, ৪ আগস্ট সরকার পতনের আগের দিন প্রচন্ডভাবে মার খেয়েছিলেন, দলের অন্যতম সহসভাপতি বিএমএ সালাম।
দলের অফিসের নিচে বিএমএ সালাম, খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, যুবলীগের নগর সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল সুজন একই সময়ে, একই সাথে, একই জায়গায় হামলার শিকার হয়েছিলেন। হামলার পরে বিএমএ সালাম অদ্যাবধি অসুস্থ থাকলেও দলের দুই চারজন নেতা ছাড়া অন্য নেতারা খোজ নেননি।
শেখ হারুন ৫ কি ৬ আগস্ট বিএমএ সালামের কাছে ফোন করে দুই চার কথা বলেছিলেন কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী আজ পর্যন্ত একটা ফোনও করেন নি। শনিবার সন্ধ্যায় অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময়ের সাথে আলাপকালে বিএম এ সালাম জানান, হারুন ভাই বয়স্ক মানুষ, তিনি খোজ নেননি এটা মেনে নেয়া যায়, কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক গত তিন মাসে একটিবার জন্যও খোজ নেন নি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিখোঁজ, এটা মানতে কষ্ট হয়।
তিনি আরও জানান, এতো প্রতিকুলতার মধ্যেও দলের সভানেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত আহত হবার পরে তার চিকিৎসা ও অন্যান্য খবর নিয়েছেন, অথচ দলের সাধারণ সম্পাদকের সময় হয় নি তার খোজ নেয়ার। পাল্টা তিনি জানতে চান, আসলেই সুজিত কোথায়? কবে, কখন, কিভাবে সে জেলে?
এদিকে, ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পট পরিবর্তনে এই পর্যন্ত হওয়া ৬ মামলা নিয়ে শীর্ষে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান জামাল। অন্যদিকে, দলের জেলা সভাপতি শেখ হারুন ৩ টা, এডভোকেট সুজিত ৩ টি, সাবেক এমপি আব্দুস সালাম মুর্শিদি ৪ টা, সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ ২ টি, খুলনা- ১ এর সাবেক এমপি ননি গোপাল মন্ডল ১ টা, সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান বাবু দুদকের মামলাসহ ২ টি, সাবেক এমপি রশিদুজ্জামান মোড়ল ১ টা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আকরাম ২ টা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিব ৩ টা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান মুসল্লির নামে ১ টা মামলা রয়েছে।
এর বাইরে পরকিয়া প্রেমের কারনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ১ টা ধর্ষণ মামলা রয়েছে। একই অবস্থা দলের এক সাংগঠনিক সম্পাদকের।
সূত্র মতে, বিএনপির এক নেতা জেলে থাকায় তার স্ত্রীর সাথে আওয়ামী লীগের এই নেতা পরকিয়া সম্পর্ক গড়ে তুললে পট পরিবর্তনের পরে জেল থেকে বের হয়ে এসে ওই নেতা তার স্ত্রীর সাথে পরকিয়ার দায়ে তাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে মামলায় জড়িয়ে ফেলেন।
অন্য দিকে, জেলা আওয়ামী লীগের যেসব নেতার নামে মামলা হয় নি তারা হলেন, সাবেক হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, জেলার সহসভাপতি এডভোকেট শেখ সোহরাব আলি সানা, এডভোকেট মুজিবর রহমান, এডভোকেট রবিন্দ্র নাথ মন্ডল, এডভোকেট ফরিদ আহমেদ, রফিকুর রহমান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম খালেদিন রশিদি সুকর্ণ, প্রেম কুমার মন্ডল, শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল, খুলনা- ৬ আসনের গত নির্বাচনে তিন প্রার্থী রাসেল, মনিরুল ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ কচি, উপ দফতর সায়েদুল হক সম্রাট, জামিল খান প্রমুখ। অসুস্থতার কারনে জেলা সদস্য অসিত বরন বিশ্বাসও মামলার হাত থেকে এই যাত্রায় নিষ্কৃতি পেয়েছেন।
এর পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে জেলা যুবলীগ সভাপতি চৌধুরী রায়হান ফরিদের নামে সর্বোচ্চ পাচটি মামলা হয়েছে, রায়হান ফরিদ ছাড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতার নামে কোন মামলা হয়নি। নিষিদ্ধ ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নামে অজ্ঞাত কারনে কোন মামলা হয়নি, তবে জেলা সভাপতি পারভেজ হাওলাদার জুলাই- আগস্ট আন্দোলনে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন, মামলাও খেয়েছেন। অন্যদিকে পদ পদবী না থাকলেও নিষিদ্ধ ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী সাইফ ইসলাম সাইফের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে পর্যন্ত মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতা এই মামলায় সাইফের পার্টনার।