
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ডক্টর ইউনুসের বক্তব্যে দেশবাসীর পাশাপাশি আমরাও হতাশ, জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গে দুই রকম বক্তব্য দিয়েছেন, দ্রব্যমুল্য নিয়ে চলমান ইস্যুতে কোন কথাই তেমন বলেন নি অথচ এটা দেশবাসী একান্তভাবে আশা করেছিলো।
অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স। সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে ৯০ এর গনঅভ্যুত্থানের এই নেতা বলেন, সরকার মৌলবাদের দিকে হাটছে কিনা তা এখনও বলার সময় আসে নি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মাদ ইউনুসের সাথে আমাদের দলের দুই দফা আলোচনা হয়েছে। ডক্টর ইউনুসকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ‘২৪ এর আকাঙ্ক্ষায় দেশ চালানোর কথা বলেছি, এটা সাধারণ জনগনের প্রত্যাশা। সাক্ষাৎকারে সিপিবি নেতা কমরেড প্রিন্স বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সরকার চলবে, আমরা সেটাই পর্যবেক্ষণে আছি। আমরা আশা করি, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে দলের পল্টনস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে তিনি এই সাক্ষাৎকার দেন। চলমান রাজনৈতিক ইস্যুসহ দেশের বিদ্যমান অন্যান্য বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেন।
রুহিন হসেন প্রিন্স তৃণমূল থেকে উঠে আসা এক সাহসী যোদ্ধা। বিভিন্ন সময়ে বহু দেশ সফর করেছেন, নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এই চির তরুনের ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের একজন কর্মী হিসেবে আশির দশকে খুলনাতে পথ চলা শুরু।
পরবর্তীতে মহানগর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, জেলা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সদস্য, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব বিভিন্ন সময়ে পালন করেন। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে সফল আন্দোলন গড়ে তুলতে নেপথ্যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র জীবন ও ছাত্র রাজনীতি শেষ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে যোগ দেন।
পরবর্তীতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন দায়িত্ব পালন শেষে আজকের রুহিন হোসেন প্রিন্স দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। জনবান্ধব ও মিডিয়া বান্ধব। দলের একজন তাত্ত্বিক নেতা। সুবক্তা হিসেবে রুহিন হোসেন প্রিন্স বরাবরই সমাদৃত। টকশোর নিয়মিত মুখ হিসেবে তিনি দেশ বিদেশ পরিচিত। সব সময়েই সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলে থাকেন।
আলাপকালে প্রিন্স জানান, দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন প্রশ্নে সঠিক দিক নির্দেশনা শুনতে চেয়েছিল কিন্তু সবাইকে হতাশ করে দিয়ে ডঃ ইউনুস যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে আরো ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একদিকে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন নির্বাচনি ট্রেন যাত্রায়, অন্য দিকে বলেছেন সংস্কার কমিশন সংস্কার শেষ করার পরেই নির্বাচন। প্রয়োজনে সময় আরও লাগতে পারে।
প্রিন্স জানান, মনে হচ্ছে সরকার দীর্ঘ মেয়াদে থাকতে চাচ্ছেন।
যদি এমন হয় সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কি করবে এমন প্রশ্নে প্রায় সাড়ে তিন যুগ রাজপথে থাকা ফ্রন্ট লাইনের এই ফাইটার জানান, সেক্ষেত্রে ভোটের অধিকারের জন্য আবারও রাজপথে থাকবে তার দল ও বাম মোর্চা।
প্রিন্স জানান, গনঅভ্যুত্থানের চেতনা কোন ভাবেই নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। এই চেতনা বা বিজয় হাইজ্যাক করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, চলছে। এই চেতনা ভুলুন্ঠিত হলে আমাদের সমস্ত অর্জন নষ্ট হয়ে যাবে। জাতি হিসেবে সব মহল তথা বিশ্ব দরবারে আমরা কলঙ্কিত হবো।
তিনি বলেন, আন্দোলনে হতাহতদের চিকিৎসার টাকা দেশের অর্থ দিয়েই করা উচিৎ, শুনতেছি এই জন্য বিশ্ব ব্যাংক অর্থ দিতে চাচ্ছে, এটা নেয়া উচিত না। তাতে জাতি হিসাবে আমরা ছোট হয়ে যাবো। প্রিন্স বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হওয়া উচিত। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের আরো মনোনিবেশ করা উচিত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে উৎপাদক ও ক্রেতার মধ্যে সমন্বয় যাতে থাকে সে ব্যাপারে সরকারের জোরালো নজরদারি রাখা উচিত।
প্রিন্স বলেন, ভোক্তা সব সময় ঠকে আসছে, বিক্রেতারাও ঠকে আসছে, আমরা দেখি থার্ড পার্টি লাভবান হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য কমাতে চাঁদাবাজ টোটালি বন্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হবার পরে আরেক গ্রুপ এসে জেকে বসেছে। আগের মতোই চাদাবাজি করছে। হাত বদলের জন্য ৫ আগস্ট গন অভ্যুত্থান হয় নি।
প্রিন্স আরও বলেন, ন্যায্য মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কেন্দ্র আরো বাড়ানো উচিত। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ এমন অনেক ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে, এতে নিম্ন আয়ের গরিব, অসহায় ব্যক্তিরা বিপর্যয়ে পড়েছে। টিসিবিকে আরো জনবান্ধব হতে হবে।
ইউনুস সরকারকে মুল্যায়ন প্রসঙ্গে প্রিন্স বলেন, ডিজিটাল সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যাংক সেক্টরে যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ বিদেশ থেকে দ্রুত ফেরত আনার দাবিও জানান তিনি।
সবশেষে, ডক্টর ইউনুস নিশ্চয়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচারী হয়ে উঠবেন না এমনটি আশাবাদ প্রিন্সের।
তিনি জানান, সিস্টেমের কারণেই শেখ হাসিনা পরিবার কেন্দ্রিক স্বৈরাচারী হয়ে গিয়েছিলেন। আমাদেরকে এই সিস্টেমটাই বদলাতে হবে নতুবা ডক্টর ইউনুস- আমি- আপনি যেই চেয়ারে বসি না কেন, স্বৈরাচার হতে বাধ্য।