
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রাজনীতির আলোচিত চরিত্র, বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি মেজর অব: আখতারুজ্জামান বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহসাই লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই ফিরবেন। তিনি সরকারকে কোন ভাবেই বিব্রত করতে চাচ্ছেন না। চাইলে রাতারাতি তার চলমান মামলা ঢিসমিস করে দেয়া যায়, কিন্তু তিনি বা বিএনপি সেটা চাচ্ছে না। তিনি আসলে দেশে জেল খাটতে হবে এমন গুঞ্জন আছে, জেলে যাবার ভয়ে তিনি দেশে ফিরে আসতে ভয় পাচ্ছেন এমন প্রশ্নে মেজর আখতার বলেন, বিএনপি বা তারেক রহমানতো এই রায় মানেনই না, জেল খাটার প্রশ্ন আসছে কেন? তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই রায় ছিলো শেখ হাসিনা সরকারের ফরমায়েসি রায়, ষড়যন্ত্রমূলক রায়।
অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর আখতার এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসএ অবস্থিত “রাওয়া ক্লাবে” তিনি এই সাক্ষাৎকার দেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি, শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ইউনুস সরকার, আগামী নির্বাচন, বিএনপি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন সামরিক বাহিনীর এই সাবেক কর্মকর্তা। আলাপকালে তিনি বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সামরিক আইন আসার সম্ভবনাকে নাকচ করে দেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত ইউনুস সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেবেন। দেশে আবারও গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন হাসিনা সরকার ক্ষমতায় ছিল। তাদের পতনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার সবে যাত্রা শুরু করেছে। এ সরকারকে অবশ্যই সময় দেওয়া উচিত, সবকিছু সংস্কার না করে নির্বাচন করাটা বোকামি হবে, কেননা সরকারের রন্ধে রন্ধে এখনও সাবেক সরকারের প্রেতাত্মা রয়েছে।
মেজর অব: আখতারুজ্জামান। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ। মিডিয়া বান্ধব পরিচ্ছন্ন এক রাজনৈতিক ব্যক্তি। টিভি চ্যানেলগুলির টকশোতে পরিচিত মুখ। ৯১ ও ৯৬ এর সংসদে এমপি ছিলেন। তবে ৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন তিনি করেন নি। নানা কারনে মেজর আখতার আলোচিত। প্রচন্ড স্পষ্টবাদী। ঠোটকাটা বক্তব্যের জন্য দল ও দেশ বিদেশে সমালোচিত। ক্ষেত্রবিশেষে যেমন দলে নিন্দিত, তেমনি আবার দলের বাইরে নন্দিত। দলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধেও তিনি অবলীলায় কথা বলেছেন, কথা বলেন।
প্রয়োজনে সমালোচনা করেছেন, করেন। এজন্য বেশ কয়েকবার দল থেকে শোকজ খেয়েছেন, বহিষ্কার হয়েছেন, আবার দলে ফিরেও এসেছেন। আলাপকালে মেজর আখতার বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগ জনক, সরকারকে আরো সজাগ, সতর্ক, কৌশলী হতে হবে কেননা এই সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রুট লেবেলের জনগণের সাথে তাদের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। সেজন্যই মাঠ পর্যায় থেকে তারা কোন সঠিক মেসেজ পাচ্ছেন না, সারা দেশের সাথে তাদের সঠিক কোন নেটওয়ার্ক নাই।
ফলে সরকার যেকোনো সংবাদ দেরিতে পাচ্ছে, বা বিভ্রান্তকর তথ্য পাচ্ছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো না। দ্রুত আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, জনগনের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমি এই সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকলে গন অভ্যুত্থানের পর পরই আওয়ামী পুলিশের অপেক্ষায় না থেকে ছাত্র জনতাকে এবং অবসরে যাওয়া নন কমিশন সেনাসদস্যদের পুলিশে নিয়ে নিতাম। এমন গ্যাপ রাখতান না।
আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে গন অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে সরকারকে আরও ডায়নামিক হতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা সত্যিকার অর্থেই ফ্যাসিস্ট ছিলো, ব্যাংক সেক্টর শেষ করে দিয়েছে। ডলার সংকট ছিলো। তাদের আমলে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। তাদের ব্যাংক ডাকাতি, লুটপাট, বিএনপ নেতা-কর্মীদের প্রতি হামলা- মামলা অবিশ্বাস্য। দেশকে দেউলিয়া করে গেছেন। ভারতীয় আধিপত্যের কাছে শেখ হাসিনার সরকার ছিলো আক্ষরিক অর্থেই অসহায়। মেজর আখতার বলেন, নির্বাচন প্রশ্নে ঐক্যমত কোন বিষয় না। নির্বাচনে কে আসলো আর কে আসলো না এটাও বিষয় না। জনগন স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারলেই হলো।
ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির হার বাড়াতে হবে। মিনিমাম ৬০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত থাকতে হবে। তারা মুক্ত মনে ভোট দেবে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন প্রশ্নে সঠিক ও স্পষ্টভাবে কিছু বলছেন না। তিনি ও তার উপদেষ্টারা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে হেয়ালি আচরণ করছেন, একরকম ধোকা দিচ্ছেন।
ডক্টর ইউনুসকে ইংগিত দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যত দ্রুত নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেবেন, ততোই দেশের মঙ্গল, গনতন্ত্রের জন্য মঙ্গল। ক্ষমতার নেশায় ইউনুস সরকার শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট হয়ে যেতে পারেন, এমন আশংকা তার।