
বিশেষ প্রতিনিধি:
নতুন করে আলোচনায় ৫ আগস্ট বিকেলে বাঁশের লাঠিতে জাতীয় পতাকা টানাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে নিহত বিএল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রকিবুল হাসান রকি। শেখ হাসিনার পতনের পরে তিনি আনন্দ করতে গিয়ে নিজের ভুলে নিজেই মারা যান। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মামলার আবেদন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
জানা গেছে, খুলনার আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৩১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আবেদন করেছেন নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম গাজী। সে থেকেই এই মামলার আবেদনের ঘটনা এখন টক অব দ্য খুলনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস- অফিস পাড়ার আড্ডায় পাইকগাছার এই মামলা এক কথায় জেলা ও নগরের সর্বত্র সর্বোচ্চ আলোচনায়। সূত্রমতে, এই মামলার বিবরন লিখে গত ২১ নভেম্বর চিফ প্রসিকিউটরের কাছে অভিযোগটি জমা দেন তিনি। তদন্ত সাপেক্ষে মামলা হবে এমনটি আভাস পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থল পাইকগাছা হলেও মামলার অভিযোগে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, কেসিসির অধিকাংশ কাউন্সিলর, খুলনা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক ও আইনজীবীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। আন্দোলন চলাকালে তাদের কেউ কেউ ছাত্রদের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নেন। আবার ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষেও ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে দূরে আছেন এমন কেউ কেউও আসামীর তালিকায় আছেন। যারা জীবনে কোনদিন পাইকগাছাতে যাননি, তাদের নামও এসেছে এই তালিকায়।
মামলার বাদী ও নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম গাজী গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি জানান, রোববার ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে দুজন ছাত্র তার পাইকগাছা গ্রামের বাড়িতে যান। সেখানে তার ছেলে মৃত্যুর সব কাগজপত্র সংগ্রহ করেন এবং সাহায্যের কথা বলে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। শুক্রবার বিভিন্ন লোক তাকে মামলার বিষয়টি জানালে তিনি ভয় পেয়ে যান। শনিবার সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন মামলা প্রত্যাহারের জন চাপ দিতে থাকে। ভয়ে তিনি দোকান বন্ধ করে লুকিয়ে আছেন।
মামলার অভিযোগে নিহতের বাবা উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট সকালে চাঁদখালী গ্রামে ছাত্র-জনতা মিছিল করে। ওই মিছিলে আওয়ামী লীগ হামলা ও গুলিবর্ষণ করলে অনেকেই আহত হন। কিন্তু আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে আসামিরা আন্দোলনকারীদের বিদ্যুৎস্পর্শে মারার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চাঁদখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তার মাঝে পড়ে থাকা বাঁশ ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কাঁচা বাঁশের মাথায় বাঁধা পতাকা হাতে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় রকি বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান।
এজাহারে অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি শেখ হেলাল, সেখ জুয়েল, সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সাবেক এমপি এস এস কামাল হোসেন, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, আক্তারুজ্জামান বাবু, মন্নুজান সুফিয়ানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মোল্লা ইউনুস আলী ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, আন্দোলনের পুরোটা সময় রকি সামনের সারিতে ছিলেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে শুনে আমরা মিছিল নিয়ে বিএনপি অফিসের সামনে চলে আসি। এ সময় জাতীয় পতাকা টানাতে গিয়ে রকি বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান। খুঁটিতে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছিল বলে মনে হয়নি। তবে রকিকে শহীদের মর্যাদা দিতে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সূত্রমতে, এমন মামলার আবেদনে বিএনপি- জামাত নেতারাও কিছুটা ক্ষুদ্ধ, বিরক্ত, বিব্রত। এই অংশের মতে রকির মৃত্যুর ঘটনা পাইকগাছার সবাই জানে। তারপরেও অতি উৎসাহি কেউ কেউ এমনভাবে মামলা সাজানোর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন যা পক্ষান্তরে ২০২৪ এর ছাত্র জনতার আন্দোলনে সংগঠিত গন-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। মামলার নামে বানিজ্য করতে নেমেছে কেউ কেউ এমন মন্তব্য অনেকের।