
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আলাদা হওয়া অত্যন্ত কষ্টের। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। কিছু ক্ষেত্রে এটি পরম আনন্দের। জোড়া শিশু নূহা ও নাবাকে আলাদা করার আনন্দ ছুঁয়েছে স্বজন, চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। ২ বছর ৭ মাস ২০ দিন পর রোববার সুস্থ হয়ে মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরেছে তারা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শিবরাম কাঁঠালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন আক্তার ও আলমগীর হোসেন দম্পতির সন্তান নূহা ও নাবা। তাদের শরীরের পেছনের অংশ যুক্ত ছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলে ‘কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৫টি সফল অস্ত্রোপচারের পর পরিপূর্ণ সুস্থ হয় তারা। বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবিন ব্লকের ষষ্ঠতলায় দুই শিশুর চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়। পরে তাদের রিলিজ দেয়া হয়। এ সময় সবার মুখে হাসি ফোটে। বিএসএমএমইউ প্রশাসন, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান স্বজনরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।
নূহা ও নাবার চিকিৎসা বাবদ ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে কেবিন ভাড়া, হাসপাতালের ফার্মেসির মাধ্যমে ওষুধ ক্রয়, নিউরোসার্জারি বিভাগের অপারেশনকালীন ক্রয় করা ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামে ব্যয়, অ্যানেসথেশিয়াসামগ্রী ও অপারেশন বা ওটি চার্জ ইত্যাদি। এই ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বহন করেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। আর ১৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে অনুদান হিসাবে। অনুদানকারী তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
ডা. মো. রেজাউর রহমান জানিয়েছেন, নূহা ও নাবাকে রিলিজ দেওয়া হলেও চিকিৎসার জন্য ফলোআপে থাকতে হবে। আরও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
শিশু নূহা ও নাবার জন্ম হয় ২০২২ সালের ২১ মার্চ। বিএসএমএমইউতে তাদের ভর্তি করানো হয় ৪ এপ্রিল ২০২২ সালে। তারপর থেকে তারা এখানেই বেড়ে উঠেছে। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে নিউরোসার্জনরা এবং অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জনরাসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সরা দুই শিশুর চিকিৎসায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই নূহা ও নাবা আলাদা হওয়ার আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।
বিএসএমএমইউতে এ পর্যন্ত তিন জোড়া শিশুকে আলাদা করা হয়েছে এবং আরও এক জোড়া শিশুকে আলাদা করার প্রস্তুতি চলছে।