
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানার মামলায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মোল্লা জালালের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার ঢাকার -১৩তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোর্শেদ আলম শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে তার এই শুনানিতে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার শুনানি করে জামিন চান। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
ওকালতনামায় আসামির পক্ষে জামিন আবেদনে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। সেখানে মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আব্দুল আওয়াল, মোহাম্মদ খায়রুল আলম ও খোরশেদ আলমের নাম আছে।
এ বিষয়ে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমি কোনো শুনানিতে অংশ নিইনি। পরে মামলার বিস্তারিত বললে তখন তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু মনে নেই এখন।
তবে মাসুদ আহমেদ তালুকদার শুনানিতে অংশ নেওয়ার ঘটনা স্বীকার করে মামলার মূল আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল বলেন, আজ (সোমবার) মোল্লা জালালের জামিন হয়েছে। ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। জামিন পাওয়ার পর তিনি কারামুক্ত হয়েছেন।
শুনানিতে কারা ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই ছিলেন। সিনিয়রদের মধ্যে মাসুদ আহমেদ তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, খায়রুল বাশার এবং রাষ্ট্রপক্ষের একজন ছিলেন। যদিও তার নাম বলা ঠিক না।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সোহেল মিয়াও এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপিপন্থি এক আইনজীবী বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পর নতুন এই বাংলাদেশে একটা সুন্দর বিচার ব্যবস্থা দেখতে চেয়েছিলাম, যেখানে আইনের শাসন নিশ্চিত হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বিএনপিপন্থি আইনজীবীদেরকে হাত করে স্বৈরাচারের পক্ষের লোকদের জামিন করাচ্ছেন। এসব নামধারী বা পদধারী হলেও এই নেতাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করি।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, এই সময়ের সঙ্গে এটা যায় না। একজন আইনজীবী হিসাবে এবং দলের শীর্ষ নেতাই তো বলা চলে ম্যাডামের উপদেষ্টা যেহেতু। এই সময়ে এটা যায় না বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, আমাদের যারা এই ঘরানার বা নেতৃত্বস্থানীয় জায়গায় আছি কেউ এই জাতীয় আসামির পক্ষে শুনানি করেছে বলে আমার জানা নাই। আজকে এটা নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র আইনজীবীরা সবাই সমালোচনা করে আমার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এটা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
মোল্লা জালালের জামিন আবেদনের পিটিশনে বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মামলার বাদী এজাহারে ঘটনার তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর উল্লেখ করলেও বাদী দীর্ঘ ১ মাস ১২ দিন পর বিলম্বের কারণ উল্লেখ না করে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এবং ঘটনার সময় সলেমান সেলিম ও অজ্ঞাতনামা একজন লোক বাদীর চোখ বেঁধে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে অজ্ঞাত বাসায় নিয়ে যায়। মামলায় কোথায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা বাদী এজাহারে উল্লেখ করেনি। বাদীকে মারধরের ঘটনায় কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট নাই।
গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর সেগুন বাগিচার থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে এদিনই ঢাকার মহানগর হাকিম আখতারুজ্জামান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ১ নভেম্বর অপহরণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে সাংবাদিক মোল্লা জালাল ও তার সহযোগী সলেমান ওরফে সেলিমের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন এক নারী। এজাহারে তিনি নিজেকে সংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
এর আগে গত বছর ২৯ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাসে আগুন দেওয়ার মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর। ওই মামলায়ও তার জামিন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার।