
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের ফলে প্রতিষ্ঠানটির কাজে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কমিশন শূন্যতায় কাজ কীভাবে চলবে, এর কোনো নির্দেশনা দুদক আইন বা বিধিতে না থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না।
বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার মুখে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মকর্তারা সময় পার করছেন ‘রুটিন ওয়ার্কে’।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নামে স্বাধীন সংস্থা হলেও কার্যত ‘পরাধীন’ দুদকের কমিশন বারবার গঠিত হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে বিভিন্ন সময় পট পরিবর্তনের পরই কমিশনের কর্তাদের আকস্মিক বিদায় নিতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর কয়েকটি কমিশন তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুদককে প্রকৃতই স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে রূপ দিতে হবে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে, যাতে তারা কারও আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ না করেন। এক্ষেত্রে কমিশন নিয়োগের জন্য গঠিত বাছাই কমিটিকে রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেমে জাগ্রত হতে হবে। তারা এমন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবেন, যাতে কোনো বিতর্কের সুযোগ না থাকে।
অতীতে অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের তথ্য ও সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তদন্তের উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়টি বারবার আলোচনায় এসেছে। সে সময় দুদকের কর্মকাণ্ড দেখে এ কমিশনকে কেউ কেউ কাগুজে বাঘ হিসাবে অভিহিত করেছেন।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার জন্য দায়ী উচ্চমহলের তদবির এবং আমলা ও প্রভাবশালীদের অযাচিত হস্তক্ষেপ। দেশের মানুষ দুদককে যথার্থই স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখতে চায়। ব্যক্তিজীবনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, আমলাতান্ত্রিক স্বার্থমুক্ত এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় মনোভাবাপন্ন দক্ষ ব্যক্তিদের কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া দরকার।
বিগত শাসনামলে আমরা দেখেছি, দুদক কেবল বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল, সরকারি দলের নেতাকর্মী ও তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া দূরের কথা, তদন্ত পর্যন্ত হয়নি কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এভাবেই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।
দুদক সংস্কারে কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ কমিশন যে সুপারিশ করবে, তা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। দুদককে একটি স্থায়ী কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে হবে-ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক না কেন, দুর্নীতিবাজরা যাতে দুর্নীতি করার সাহস না পায়।