
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নানা পক্ষের বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধ ও সংঘাতে রাজধানী ঢাকা প্রায়ই অচল হয়ে পড়ছে। বিগত সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা থাকলেও পুলিশের পক্ষে তা সহজ হচ্ছে না, প্রয়োজন পড়ছে সেনাবাহিনীর।
রাজপথ অবরোধ, সংঘাত-সহিংসতা যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনায় সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নও উঠছে। সম্প্রতি ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজকে ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া এলাকা।
মাত্র একদিন আগে বুটেক্সের আজিজ হল ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের লতিফ হলের শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। গত কয়েকদিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক ও মালিকরাও বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তারাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের দাবি নিয়ে মাঠে নামছেন।
এটা ঠিক, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিগত সময়ে তাদের দাবিদাওয়া সরকারের কাছে জানাতে পারেনি। কেউ দাবিদাওয়া জানাতে রাস্তায় নামতে চাইলে সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। বিগত সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জনসাধারণের পাহাড়সম প্রত্যাশা মেটানোর কাজটি সহজ নয় জেনেও তারা সংস্কারকাজে নিয়োজিত আছেন।
অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তনও আসছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত আবর্জনা যেমন চোখের নিমিষে সাফ করা সম্ভব নয়; তেমনই সব অনিয়ম রাতারাতি নিয়মে পরিবর্তন করার জন্য চাই যৌক্তিক সময়। সব মহলকে বাস্তবতা বুঝে তাই ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দাবি আদায়ের চেষ্টায় অস্থিরতার জন্ম দিয়ে আমরা যেন প্রত্যাশা পূরণের অন্তরায় হয়ে না দাঁড়াই, সে ব্যাপারে সবারই বিবেচনাবোধের প্রয়োজন রয়েছে।
দাবি আদায়ের মতো বিষয় সহিংসতায় রূপ নেওয়া কাম্য নয়। খতিয়ে দেখা দরকার, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রাজধানীতে এমন অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন রয়েছে কি না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানা পক্ষ যেভাবে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাজধানীকে অচল করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তা চলমান থাকলে দেশের অগ্রগতি যে বাধাগ্রস্ত হবে, তা বলাই বাহুল্য। যে কোনো দেশের রাজধানী হচ্ছে হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কসম।
কারণ এখানেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর অবস্থান। একই সঙ্গে যারা দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত, তাদেরও বাসস্থান এখানেই। কাজেই রাজধানীকে সবসময় অন্য শহরগুলোর তুলনায় অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থাও থাকে উচ্চমাত্রার।
কিন্তু গত কয়েকদিনের ঘটনায় রাজধানীর নিরাপত্তাব্যবস্থার বিষয়টি কতটা গুরুত্ব পেয়েছে, তা নিয়ে কোনো কোনো মহল সংশয় প্রকাশ করছে। দিনের পর দিন এ নগর নানা দাবিদাওয়ার স্থান হয়ে ওঠায় এমন প্রশ্ন ওঠা যৌক্তিকও বটে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীতে সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।