
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নানা বিতর্ক- আলোচনা- সমালোচনার পরেও অবশেষে সম্মেলনের পথেই এগোচ্ছে খুলনা মহানগর বিএনপি। জেলা কমিটি ভেঙ্গে দেবার পরে শহর ধরে গুঞ্জন ছিলো, মহানগর কমিটিও ভেঙ্গে দেয়া হবে। কিন্তু সেই বাধা- বিপত্তি সফলতার সাথে অতিক্রম করেছে বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব। অদ্ভুত এক চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে চলেছে বর্তমান আহ্বায়ক এডভোকেট শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের নেতৃত্বাধীন বিএনপি। অনেকটা ভিনি- ভিডি- ভিসি অর্থাৎ এলেন, দেখলেন, জয় করলেনের মতোই।
জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে ইতমধ্যেই নগরীর ৩১ টা ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়ে গেছে। এখন চলছে পাঁচটি থানা সম্মেলনের প্রস্তুতি। থানা সম্মেলন শেষ হলেই নগর সম্মেলন।
এদিকে, থানা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হতেই আকস্মিকভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আহবায়ক এডভোকেট শফিকুল আলম মনা খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারপরেও সম্মেলনের কার্যক্রম পিছিয়ে নেই। সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন তার অনুসারীদের বলেছেন, মনা ভাইয়ের জায়গায় যদি আমি (তুহিন) নিজেও অসুস্থ থাকতাম, তাতেও সম্মেলন পিছিয়ে থাকবে না।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব, ৯০ এর গন-অভ্যুত্থানের অবিসংবাদিত সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুল আলম তুহিন গনমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য আমাদের সাংগঠনিক কাজ করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের দমন- নিপীড়ন- নির্যাতনের কারনে আমরা কেউই বাড়ি বা খুলনায় থাকতে পারিনি। তারপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনায় অল্প সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি। চলতি মাস ডিসেম্বরে মহানগর সম্মেলন শেষ করতে যাচ্ছি।
সুত্রমতে, এবার ওয়ার্ড থেকে প্রতিটি স্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারা নেতৃত্বে আসছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মনা তুহিনের নেতৃত্বে বিএনপি নতুনভাবে এগিয়েছে। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে সম্মেলনে দৃষ্টি ফেলছে খুলনা মহানগর বিএনপি। নেতা- কর্মীদের মধ্যে সাজ সাজ সাড়া পড়েছে। ইতিমধ্যে নগরীর ৩১টি ও ওয়ার্ডেই সরাসরি ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে।
সূত্রমতে দলের দুই কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারি হেলাল, রকিবুল ইসলাম বকুল এতোদিন খুলনার রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখভাল করলেও এবার খুলনার অফিশিয়ালি দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছেন, দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, ডাকসুর সাবেক ভিপি, সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান। এই তিন নেতার পাশাপাশি সদর আসনের সাবেক এমপি আলি আজগর লবিও সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন, এমন আভাস পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় এই চার নেতার নির্দেশনা পেলে চলতি মাসেই মহানগর সম্মেলন হতে যাচ্ছে, এটা একরকম নিশ্চিত।
জানা গেছে, থানা ও নগর সম্মেলন সামনে রেখে নগর নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ওয়ার্ডের মতোই ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা দিয়েই থানা নেতাও নির্বাচন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে থাকা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন দীর্ঘদিনের কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আল মনাকে আহ্বায়ক, তরিকুল ইসলাম জহিরকে যুগ্ন আহ্বায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দলটিতে দীর্ঘ দায়িত্বে থাকা সাবেক নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীদের বিদ্রোহের মুখে পড়েন। সমস্ত চ্যালেঞ্জ মনা- তুহিন তাদের ধৈর্য, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অতীত অভিজ্ঞতা দিয়ে মোকাবলা করেছেন।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১ মার্চ ঘোষিত হয় ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি। একদিকে বিদায়ী সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা, বিভাগীয় সমাবেশ, লংমার্চ, কারাবাস, পলাতক জীবন, অন্যদিকে দলের একাংশের বিরোধীতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আহ্বায়ক কমিটি। এ অবস্থায় প্রথমে নগর জুড়ে ৩৪টি ইউনিটে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহ করেছে দলটি, যা কিনা খুলনা বিএনপির ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এই সদস্যদের প্রতিনিধিদের ভোটে প্রথমে ৩১টি ওয়ার্ড ও ৩টি ইউনিয়নে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন শেষ করে। একইভাবে গঠিত হতে যাচ্ছে নগরীর ৫টি থানা কমিটি। ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন ও সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হচ্ছে। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার মাধ্যমে গোপন ব্যালটে ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হচ্ছেন। মহানগরের মনোনীত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ও সকল প্রার্থীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে ভোট ও ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। ফলে সকল ওয়ার্ডে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা নেতৃত্বে আসছেন। এবার নগর সম্মেলনে সভাপতি- সাধারন সম্পাদক পদে বা নেতৃত্বে বড় ধরনের চমক আসতে পারে, এমন আভাস পাওয়া গেছে।