
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখো জনতার উপস্থিতিতে কনকচাঁপা, ইথুন বাবু, বেবী নাজনীনদের নিয়ে রাজধানীতে উন্মুক্ত কনসার্ট করছে বিএনপি।
মহান বিজয় দিবসে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ২টায় ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ কনসার্ট শুরু হয়। যেখানে ‘উরাধুরা’, সাগরিকাসহ জনপ্রিয় একাধিক গানের মধ্যদিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মাতান আমাদের দেশীয় শিল্পীরা।
সংগীতশিল্পী ইথুন বাবু এবং মৌসুমী দুপুর আড়াইটায় মঞ্চে উঠেন। তারা গেয়েছেন ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ গানটি। কনসার্টের শুরুতে গান পরিবেশন করেন শিল্পী নাসির খান। পরে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে মঞ্চে ওঠেন প্রীতম হাসান। তিনি প্রথমে ‘খোকা’ গান পরিবেশন করেন। পরে ‘হাতে লাগে ব্যথারে’, ‘উরাধুরা’ গানগুলো পরিবেশন করেন। এরপরে মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন কনকচাঁপা। ‘সাগরিকা, বেঁচে আছি তোমারই ভালোবাসায়’ গানটি করেন তিনি।
একে একে একক গান পরিবেশন করছেন শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশিদ আলম, বেবী নাজনীন, মনির খান, কণা, ইমরান, প্রীতম, জেফারসহ অনেকে। এ ছাড়া নগরবাউল, ডিফারেন্ট টাচ, আর্ক, সোলস, শিরোনামহীন, আর্টসেল, অ্যাভয়েড রাফা ও সোনার বাংলা সার্কাসও পারফর্ম করছেন। আয়োজকেরা বলছেন, কনসার্টটি রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কনসার্ট চলছিল।
জাতীয় সংসদ ভবনের উল্টো দিকে সড়কে মঞ্চ করা হয়েছে। কনসার্টের জন্য মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের এক পাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। অন্য পাশের সড়ক দিয়ে উভয় দিকের যানবাহন চলাচল করে। কনসার্টে গান উপভোগ করতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জড়ো হতে শুরু করেন দর্শক-শ্রোতারা। দুপুর হতে না হতেই হাজারো মানুষের ভিড় দেখা যায়। তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায় কনসার্ট নিয়ে। দর্শকেরা সড়ক বিভাজকের গাছে উঠেও কনসার্ট উপভোগ করেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাখো জনতায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সংসদ ভবনের আশপাশ এলাকা। বিজয়ের এ কনসার্ট উপভোগ করতে আসেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। হাতে জাতীয় পতাকা আর মুখে আলপনা নিয়ে সবাই যোগ দেন এই কনসার্টে।
যাত্রাবাড়ী যুবদলের কর্মীরা বিশাল জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করে কনসার্টস্থলে যোগ দেন। সেখানে রাস্তার দু’পাশে পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা। কনসার্টে আসা ফাহিম আহমেদ নামে একজন দুপুর আড়াইটার দিকে বলেন, ‘আমি আসছি তো মূলত জেমসের গানের জন্য, কিন্তু জেমস কখন পারফর্ম করবে বুঝতেছি না। সোলস, আর্টসেলও ভালো লাগে। জেমস মনে হয় সবার শেষেই থাকবে। জেমসের গান শুনেই যাব।’
‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি গত ১০ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করেছে। মূলত বিএনপির উদ্যোগে ও পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠনটি গড়ে ওঠে। সংগঠনের আহ্বায়ক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ থেকে ১৬ বছর বাংলাদেশের মানুষ বিজয় দিবস উদযাপন করতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অত্যাচার-অনাচারের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই জাতিকে একত্রিত করার মধ্যদিয়ে এবারের বিজয় দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘বিজয় দিবসে’ বিএনপি নতুন প্রত্যাশা নিয়ে জনগণ ও নতুন প্রজন্মের সামনে হাজির হতে চাইছে বলে জানান এ্যানি।
বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ‘ধরে রাখার’ তাগিদ দিয়ে এ্যানি বলেন, দিল্লির আনুগত্য করার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরতে চাই, এই উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম।’
এদিকে অতিরিক্ত চাপে কনসার্ট চলাকালে একপর্যায়ে সাংবাদিকদের জন্য করা মঞ্চ ভেঙে পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় নিউজ-২৪, মাছরাঙা, এটিএন নিউজসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল এবং অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক আহত হন। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।