
অনলাইন ডেস্কঃ
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখার জন্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সম্ভাব্য সুপারিশ করতে যাচ্ছে তার তীব্র আপত্তি এসেছে। ইতিমধ্যে ঐ সম্ভাব্য সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। একইভাবে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ করা বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র আপত্তি উঠেছে। প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, এ সুপারিশ তারা মানবেন না।
গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান কিছু সুপারিশের কথা তুলে ধরেন। অবশ্য সুপারিশ রাখা না-রাখার বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত বলে জানান তারা। সুপারিশের মধ্যে ছিল, জনপ্রশাসনে উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি, উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখা, চাকরিতে নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা উঠিয়ে দেওয়া, কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করা ইত্যাদি। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে এ কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
কর্মকর্তাদের সংখ্যার দিক দিয়ে বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বড় ক্যাডার। এ দুটি বিভাগকে ক্যাডারে রাখা না-রাখা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা আছে। এখন বিসিএসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার হিসেবে না রেখে আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কমিশনের পরিকল্পনা, পিএসসি থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন যেমন আলাদা হয়েছে, একই রকমভাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারকে আলাদা করা। বিশেষায়িত হিসেবে এ দুটি বিভাগে প্রয়োজনে বেতন বাড়ানো হতে পারে বলেও মনে করে সংস্কার কমিশন।
সুপারিশগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই স্বাস্থ্য, প্রশাসন ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা আপত্তি তোলেন। বিশেষায়িত বিভাগ বিবেচনা করে স্বাস্থ্যকে ক্যাডার থেকে বাদ দিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশের করতে যাচ্ছে সেটির প্রতিবাদ জানিয়েছে বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য আলাদা কমিশন করার যে আলোচনা হচ্ছে তাও প্রত্যাখ্যান করেছে সরকারি চাকরিজীবী চিকিৎসকদের সংগঠনটি। গতকাল বুধবার বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এমন সম্ভাব্য সুপারিশের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ক্যাডার কাঠামোর বাইরে রাখার যে সুপারিশ সংস্কার কমিশন করতে যাচ্ছে সেই সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়ন করায় স্বাস্থ্য খাত বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুগোপযোগী হয়নি। উলটা পথে হেঁটে আমলাতান্ত্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কায়েম হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ও নীতিনির্ধারণী পদসমূহে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য ক্যাডারের দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে প্রকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। এতে বলা হয়েছে, সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্য নিরসন, গতিশীল ও জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশন প্রকৃত সংস্কার প্রস্তাব বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকে ক্যাডারবহির্ভূত করার হঠকারী সুপারিশ করেছেন। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন তৈরি ও বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সংস্কার কার্যক্রমকে তারা সাধুবাদ জানান, তবে দুরভিসন্ধিমূলক সুপারিশকে সংস্কার প্রস্তাব হিসেবে মানা হবে না।
এ সুপারিশ জানাজানির পর তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, ভাবছিলাম আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর হবে, এখন দেখি শিক্ষা ক্যাডারই বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনের একজন সাবেক নেতা সুপারিশে আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাই দাবি তুলতে হবে, ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার। ক্যাডার বৈষম্য নিরসনকল্পে কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় চাই।
এদিকে, গণমাধ্যমে কমিশনের সুপারিশ প্রকাশ হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ করার সুপারিশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, এ সুপারিশ মানবেন না। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উপসচিব পদে ৭৫ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ও অন্য ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ রাখা হোক।
সূত্রঃ ইত্তেফাক