
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সাবেক সংসদ সদস্য সালাম সালাম মুর্শেদীকে চারটি মামলায় খুলনার দু’টি পৃথক আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছেন। এর আগে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত।
পৃথক দু’টি আদালতের বিচারক হলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক তাকিয়া সুলতানা ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মো: আলতাফ মাহমুদ।
সাবেক এই ফুটবলারকে এক নজর দেখতে উৎসুক জনতা আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করে। তাকে লক্ষ্য করে জনতা ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দিতে থাকে। তাদের সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ফুলতলা থানা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক কাজী আনোয়ার হোসেন বাবুর নেতৃত্বে প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মী খুলনা ডাকবাংলা মোড়ে দলের বিভাগীয় সমাবেশে যোগদানের জন্য নদী পথে ট্রলারযোগে রওনা হয়। তাদের কিছু নেতাকর্মী চন্দনীমহল (কাটাবন) ঘাটে অবস্থান করছে এমন সংবাদ পান বিএনপি’র ওই নেতা। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ট্রলার ওই স্থানে পৌঁছানোর সাথে সাথে আওয়ামী সরকারের সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর শর্টগান, কাটা রাইফেল, বন্দুক, পিস্তল, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, রড, জি আই পাইপ, চা-পাতি, বোমা, লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলার পর স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ মামলার বাদী বিএনপি নেতা কাজী আনোয়ার হোসেন বাবু মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, সেদিন আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য ট্রলারযোগে খুলনায় যাচ্ছিলাম। ওইদিন আসামিরা আমাদের ট্রলারে উঠে আমাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করে। আমাদের লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করে তারা। ইচ্ছামতো মারধর করে। আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী তাদের হামলা থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দেন। অনেককে মারধর করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে এবং সরকারের পতন হলে তিনি দিঘলিয়া থানায় ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর এ হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন, যার নং-৩। এ ঘটনায় তিনি সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলালসহ ২১৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় খুলনা ৪ আসনের সাবেক সংসদ সালাম মুশের্দী ৯ নং আসামি। শুনেছি তার আইনজীবীরা জামিন নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিল। কিন্তু আদালত না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ হামলার বিচার চান বলে আরও জানিয়েছেন।
অপর মামলা থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ আগষ্ট বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল খুলনার দিঘলিয়ায় আসেন। এ উপলক্ষে দিঘলিয়া উপজেলা ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সোহেল পারভেজ দলীয় নেতাকর্মি নিয়ে ফেরীঘাটের সামনে অবস্থান করছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীরা অতর্কিতভাবে সালাম মুশের্দীর নির্দেশে তাদের ওপর হামলা চালায়। উপস্থিত নেতাকর্মিদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময়ে বিএনপি’র কিছু নেতাকর্মি গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় বিএনপি’র ওয়ার্ড নেতা সালাম মুশের্দীকে এক নম্বর আসামি করে ৬৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, যার নং-১১।
অপর একটি মামলা থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট বিএনপি নেতা খায়রুল ইসলাম মোল্লা দিঘলিয়া উপজেলার পুটিমারী বটতলার মোড়ে দলীয় কর্মসূচী শেষে খুলনার উদ্দেশ্যে নগরঘাট ফেরিঘাটের রাস্তায় পৌঁছান। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সালাম মুর্শেদীর নেতৃত্বে প্রায় ৮০-৯০ জন সন্ত্রাসী বিএনপি নেতাকে ঘিরে ফেলে। তাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তার নির্দেশে এ মামলার ২ নং আসামি মো. তৌহিদুল মোল্লা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা দিয়ে মাথায় কোপ দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিও করা হয়। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় সে যাত্রায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। সন্ত্রাসী পৈচাশিক উল্লাস করতে থাকে। সে সময় তারা ‘ধর ধর বিএনপি, ধরে ধরে জবাই কর’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ বছরের ২৯ আগস্ট এ হামলার ঘটনায় তিনি সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদীসহ ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে দিঘলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং ১৪।