
অনলাইন ডেস্কঃ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬ ক্যাডারের মধ্যে ২৫টি ক্যাডার জোটবন্ধ হয়ে ইতিমধ্যে কর্মবিরতি পালন করেছে। ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ আহ্বানে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রশাসন ক্যাডার বাদে বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। আজ বুধবার সকাল ১০টায় যৌথ প্রতিবাদ সভার আহ্বান করেছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। ‘শিক্ষা ক্যাডার’ বাতিলের পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।
এদিকে,পদোন্নতিসহ চাকরিসংক্রান্ত নানা দাবিতে এখন পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সরকারি চাকরিতে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখার জন্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সম্ভাব্য সুপারিশ করতে যাচ্ছে তার তীব্র আপত্তি এসেছে। ইতিমধ্যে ঐ সম্ভাব্য সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। একইভাবে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ করা বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র আপত্তি উঠেছে। প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, এ সুপারিশ তারা মানবেন না।
বর্তমানে প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব হতে পারেন। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। কমিশনের প্রস্তাবিত উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা সচিবালয়ে তিন নম্বর ভবনের নিচে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন। পরে সেখান থেকে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দোতলায় অবস্থিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের দপ্তরের সামনে যান। কিন্তু বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় তারা আশপাশে অবস্থান নেন। পরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদসহ কয়েক জন কর্মকর্তা তিন তলায় অবস্থিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও কমিশনের সদস্যসচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং নিজেদের দাবিদাওয়া সচিবের কাছে তুলে দেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কারের নামে একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্রের অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মকর্তাদের এক যৌথ প্রতিবাদ সভা বুধবার সকাল ১০টায় বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, মীমাংসিত বিষয় সামনে এসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করলে এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই।
আন্দোলনে ২৫ ক্যাডার: ২৫ ক্যাডারের মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে বড় ক্যাডার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার। এই দুই ক্যাডারে কর্মকর্তা রয়েছেন যথাক্রমে প্রায় ১৬ হাজার ও ৩০ হাজারের বেশি। তাদের ক্যাডারের বাইরে রাখার সুপারিশের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন এই দুটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত উপসচিব পুলে কোটা পদ্ধতি বহাল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিসের বহির্ভূত করার প্রতিবাদে এবং কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’র আহ্বানে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রশাসন ক্যাডার বাদে বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, কয়েক দিন আগে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশ করে। ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পরিষদ কলম বিরতি ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তারা।
সূত্রঃ ইত্তেফাক