
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নির্বাচন ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আইন পরিবর্তন করলে হবে না, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও পদ্ধতির পরিবর্তন করলেই নির্বাচনী আইনও পরিবর্তন হয়ে যাবে। ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি।’
শনিবার খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন শীর্ষক জাতীয় সংলাপের ২য় অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। সংস্কারের দায় ও নির্বাচনের পথরেখা’ নিয়ে অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা দেশের স্থিতিশীলতা চাই। আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। আপনারা (ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে) তারাও বড় চ্যালেঞ্জে পড়বেন। খুব সামনে আমাদের জন্য বড় অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এটা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে দেশের বাহির থেকে। আমাদের নতুন প্রতিবেশী তৈরি হচ্ছে। সেটা স্বাভাবিক নয়, ভিন্নধর্মী প্রতিবেশী। আরাকান এখন নতুন বাস্তবতা। আমরা এতদিন বিবেচনা করতে পারিনি। এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। দেশে নির্বাচনী আইনের বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বলেছিলাম যে নির্বাচনে যাবে আম-চ্যালা দুটোই যাবে। সেটাই হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন৷ এখনকার রাজনৈতিক দলগুলো মিস্টার আলম-টালমের মতো লোকের পয়সা দিয়ে চলছে। এখনো রাস্তায় বলা হচ্ছে আমরা ১৬-১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলাম না, নির্বাচন করতে পয়সা লাগবে, সেটার জন্য চাঁদাবাজি করছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। এই জায়গায় একটা বড় সংস্কার প্রয়োজন। আমরা দেখছি একটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে থেকে বহিষ্কার করছেন, কিন্তু এনাফ নয়।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সময়ে আমরা কিছু সংস্কার করতে না পারি তাহলে আর কখনোই করা যাবে না। কারণ আমরা ২০০৭ সালে একবার চেষ্টা করেছিলাম, কিছু কিছু করেছিলাম সেগুলো টিকেনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে। এখন না করতে পারি, সংবিধানের দোহাই দেয়, অন্যান্য আইনের দোহাই দি তাহলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের প্রতি অন্যায় হবে। বলছি না যে আমরা চার-পাঁচ বছর থাকব। একবছরের মধ্যে সংস্কার করা সম্ভব।’
তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনে উৎসাহিত করা উচিত মন্তব্য করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘তাদের অনুৎসাহ করা ঠিক নয়। আমরা মনে করি নতুন রক্ত প্রয়োজন। তাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ তাদের উৎসাহিত করুন। তারা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তাদেরকে যদি উৎসাহিত না করেন তাহলে আমরা এ জিনিসই (আওয়ামী লীগের পতন) দেখবো। আজকে না হয় ১০, ১৫ বছর পরে দেখবো।’
তিন আরও বলেন, আমরা আমাদের ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করতে গেলে সেটার পরিণতি কি সেটা দেখতে হবে। ছাত্ররা রাজনীতি অবশ্যই করা উচিত। তবে সেটা অবশ্যই ছাত্র সংসদের মাধ্যমে হওয়া উচিত। ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, শেষ পর্যন্ত লীগ হতে হতে বাচ্চা লীগও হয়ে গেছে। সেটার পরিণতি কি সেটা দেশ দেখছে।
বাংলাদেশে অবশ্যই দ্বিকক্ষ সংসদ ব্যবস্থা হতে হবে বলে মনে করেন এম সাখাওয়াত হোসেন। বলেন, সেই জায়গায় বিভিন্ন রকমের মানুষ আসবে। তারা একটা নির্বাচনের জন্য গাইডলাইন তৈরি করতে পারে। সেখানে আলাদা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হবে না।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল পরিচালনার জন্য আইন থাকা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সাহেব করেছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো মানেননি। একটা আইন অবশ্যই প্রয়োজন। না হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর যে করণীয় তা দেখছি না।আমরা দেখছি রাজনৈতিক দল তৈরি হয়, কোন্দল তৈরি হয় এবং একদল আরেকদলকে খেয়ে পেলে।
ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তৃতা করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অন্যতম নেতা মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, গীতিকবি শহিদুল্লাহ ফরাজী, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ছাত্রদলের রিসার্চ সেলের সদস্য হাবিবুর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য সারোয়ার তুষার প্রমুখ।