
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
জুলাই-আগস্টে সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যা-গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের সব ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচার আগামী বিজয় দিবসের আগেই সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, “আগামী বিজয় দিবসের আগে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মানবতাবিরোধী সব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে এবং এর বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার বদ্ধপরিকর।”
শনিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ ২০২৪-এর দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের সব বিচার সম্পন্ন করে আমরা আগামী বিজয় দিবস পালন করব।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পাশাপাশি জুলাই বিদ্রোহের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।”
“দায়িত্ব নেওয়ার পরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ কাজ না করায় কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে” উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, “কোনো প্রসিকিউটর ছিল না, আমাদের নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ করতে হয়েছে এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পুরো সিস্টেমটি পুনর্গঠন করতে হয়েছে।”
সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে দিনরাত কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের পুরো টিম সর্বোচ্চ ভালো কিছু করতে পুরোদমে কাজ করছে। আমি আশা করি আগামী বছরের মধ্যে বিচার বিভাগীয় প্রধান সমস্যাগুলোর সমাধান এবং বিচার সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।”
“গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের গোটা শাসনামলে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যা, জুলাইয়ে হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের মতো মানবতাবিরোধী অন্তত চারটি বড় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে”, বলেন আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, “আমাদের আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরপরাধ (তৎকালীন বিডিআর) জওয়ানদের কারাগার থেকে মুক্ত করতে কোনো বাধা নেই।”
সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংস্কার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পুরো আইন বাতিল করা ভালো সিদ্ধান্ত হবে না। কেননা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংঘটিত ডিজিটাল অপরাধ বিষয়ে সারা বিশ্ব জানে এবং স্বীকার করে।”
“এছাড়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে হ্যাকিং, ডিজিটাল জালিয়াতি বা অর্থ পাচারের মতো ডিজিটাল অপরাধগুলো মোকাবেলা করার জন্য আমাদের কিছু আইন-কানুন দরকার। তবে আইনের কিছু ধারায় সংস্কার আবশ্যক”, বলেন উপদেষ্টা।
সরকারের সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জনগণের ভালোবাসা ও সম্মান ছাড়া আমাদের কিছুই নেই। জনগণের কাছে আমাদের অনুরোধ, ভালোবাসা দিয়ে আমাদের কাজের সমালোচনা করুন। আমরা সব ইতিবাচক সমালোচনা মেনে নিতে প্রস্তুত।”
ড, আসিফ নজরুল বলেন, “এমন একটা পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যখন পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। এই কারণেই আমরা এমন কঠিন সময় পার করছি। এই দেশে এর আগে কেউ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।”
মো. মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অধিবেশনে বক্তৃতা করেন- বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, গুমের শিকার দিদারুল ভূঁইয়া, মায়ের ডাক’র আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহিদ আহসান।