
অনলাইন ডেস্কঃ
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে নিয়মিত জাতীয় নির্বাচনের দাবি করলেও মুখ্যত বিএনপি ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার পক্ষে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয়ভাবে বড় কোনও সিদ্ধান্তেও যাচ্ছে না দলটি। এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকরা আরও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি বুঝে সামনে এগোনোর পক্ষে। নতুন বছরে তাই বিএনপি অনেকটাই ‘ওয়েট অ্যান্ড সি পজিশনে’ রয়েছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে সন্দেহজনক পরিস্থিতির উদয় হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা সম্মিলিতভাবে সরকারের কাছে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ নিয়ে আপত্তি তোলে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণার কথা জানানো হলে ৩১ ডিসেম্বর ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’র বদলে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী অনুসারীরা।
বিএনপির প্রভাবশালী একটি সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। তারা রাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের এই উদ্যোগকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো এক ধরনের অস্বস্তিতে পড়ে। সেই রেশ ধরে দলগুলোর অস্বস্তি এখনও কাটেনি। এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী অনুসারীরা আগামী ১৫ জানুয়ারি আবারও প্রোগ্রাম করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘‘বিএনপি এখনও পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট নয়। আমাদের অবস্থান অনেকটাই ‘ওয়েট অ্যান্ড সি পজিশন’। এরই মধ্যে চলতি মাসে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার কথা রয়েছে। ফলে, ঘোলাটে পরিস্থিতি পরিষ্কার হওয়া অব্দি বিএনপির অবস্থান অত্যন্ত নিয়মিত ও স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করি।’’
বুধবার (১ জানুয়ারি) ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠেও উঠে এসেছে এই ইঙ্গিত। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যে চক্রান্তের খেলার কারণে আমাদের নেত্রীকে ৬ বছর জেলে থাকতে হয়েছে। এখনও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। সেই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’, সেই দলের নেতাদের দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। ইতিহাসে এ ঘটনা বহুবার হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই চক্রান্তকে কখনও সমর্থন দেবে না। বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে—কখনোই ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একজনকে বের করতে পারলেও দুইটা লোককে তারা সরিয়ে নিতে পারেনি। কারণ বিএনপির যে রাজনীতি, এটা হচ্ছে দেশের জনগণের রাজনীতি।’’
ছাত্রদলের সমাবেশে বৈষম্যবিরোধীদের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরীও। তিনি উল্লেখ করেন, ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র নামে কেন সমাবেশ করতে হলো। ইউনিটির নামে এ ধরনের সমাবেশ, বক্তব্য, ষড়যন্ত্রকারী, লুটপাটকারী ও ফ্যাসিবাদীদের জন্য সহায়ক নয় কি?’
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, প্রথমে লন্ডন গিয়ে সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়া আমেরিকা যেতে পারেন। তার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যেতে পারেন। সব মিলিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যস্ততা ও বেগম জিয়ার শারীরিক চিকিৎসার বিষয়টিও বিএনপির সামনে অন্যতম প্রধান প্রসঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, চূড়ান্ত অর্থে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২৬ সালের শুরুতে নির্বাচন হলে পুরো প্রক্রিয়া নির্বাচনি রাখবে বিএনপি। পাশাপাশি তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সক্রিয় থাকবে দলটির নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘নতুন বছরটা হচ্ছে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী সফল বছর। দীর্ঘ একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতনের নতুন বছর। বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে একটি ভালো নির্বাচনের কথা বলে আসছে। ভালো সরকারের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে, সংগ্রাম করেছে, দাবি করেছে। সেটি অর্জনের বছর ২০২৫।’
দলের অন্যতম এই নেতা উল্লেখ করেন, ‘বিএনপির এই চাওয়ার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের চাওয়ার মধ্যেও সাদৃশ্য রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান, আইন উপদেষ্টাসহ অনেকেই বলেছেন—পঁচিশের শেষে বা ছাব্বিশের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন হবে। বিএনপির প্রত্যাশা আরও আগে নির্বাচন করতে পারলে ভালো। না হলেও তাদের দেওয়া সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন এবং কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এগিয়ে যাবে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০-এর মধ্যে সমন্বয় রেখে ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নই বিএনপির প্রতিশ্রুতি। নতুন বছরে বিএনপির নেতাকর্মীরা জনগণের সামনে এই দাবি নিয়েই যাবেন।’
দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে যে ঘোষণার কথা বলা হয়েছে, তাতে বিএনপিও প্রস্তাব দেবে। দলের সিনিয়র নেতাদের ধারণা, ৩১ দফার ভিত্তিতেই জুলাই ঘোষণার প্রস্তাবে যুক্ত থাকতে পারে বিএনপি।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন