
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সাদা পোশাকে ডিবি আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, “কাউকে ধরতে হলে ডিবি পোশাক ও আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে।”
সোমবার ডিবি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
এসময় তিনি ডিবিতে আর কোনো আয়নাঘর ও ‘ভাতের হোটেল’ থাকবে না বলেও জানান।
বাংলাদেশে বসবাসরত অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে সরকার ৩১ জানুয়ারির পর ব্যবস্থা নেবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকেই বাংলাদেশে বসবাসরত অবৈধ বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকছে কি না এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের কারণে এখনই পুলিশ ভেরিফিকেশন বন্ধ করা যাচ্ছে না।”
তিনি জানান, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মিয়ানমার থেকে মাদকের চালান হয়, তাই সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মিদের সঙ্গে সরকার প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ডিবি অফিস পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
৫ আগস্টের আগে ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ইউনিটে টর্চার সেল বা আয়নাঘর ছিল। ডিবিতে এখনো কোনো আয়নাঘর আছে কি না- এমন প্রশ্নের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ডিবি কার্যালয়ে আয়নাঘর বলতে কোনো কিছু নেই। আর কোনো ধরনের আয়নাঘর থাকবেও না। এখন পুকুরটা একটু ময়লা আছে। আমরা তাদের বলেছি, পুকুরটা যেন আয়নার মতো করে পরিষ্কার করা হয়। এখানে কোনো আয়নাঘর থাকবে না। এখানে কোনো ভাতের হোটেলও থাকে না। এছাড়া ডিবি পুলিশদের বলা হয়েছে, তারা সিভিল পোশাকে কোনো অভিযান বা আসামি গ্রেপ্তার করবে না। তারা অবশ্যই ডিবি জ্যাকেট ও আইডি কার্ড পরে অভিযানে যাবে। আইনের বাইরে কোনো কাজ করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দুর্নীতি বা আইন বহির্ভূতভাবে কোনো কিছু করছি না।”
যদি সাংবাদিকদের কাছে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রকাশ করার অনুরোধ জানান উপদেষ্টা। বলেন, “তবে অবশ্যই সত্যি ঘটনা প্রকাশ করবেন।”
সাংবাদিকেদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “আপনারা অনেক সত্যি সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এজন্য ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত। আপনাদের সত্য সংবাদ প্রকাশের কারণে ভারতের অপপ্রচার অনেক কমে গেছে। এভাবে আপনারা সত্য সংবাদ প্রকাশ করলে, আমাদেন জন্য একশন নিতেও সুবিধা হয়।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে আলোচনা করেছি। আগের চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। তবে কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, সেব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি।”
ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে স্বীকার করে তিনি বলেন, “গত কয়েক দিনে আমরা অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।”
লিবিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “যারা লিবিয়া গিয়ে আটকে আছে, তারা কিন্তু আমাদের অনেক বড় সোর্স অব ইনকাম। তারা অনেক কষ্ট করে আমাদের দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। তারা আমাদের বড় সম্পদ। তাদের জন্য আমরা সর্বোচ্চ কাজ করার চেষ্টা করছি। তবে তথ্য প্রয়োজন। ভুক্তভোগীদের আমাদের কাছে এসে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধ রইলো।”
টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় প্রচুর অপহরণের ঘটনা ঘটছে, এব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় যতজন অপহরণের শিকার হয়েছিল, তাদের সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। আপনারা জানেন, মিয়ানমারের আরাকান আর্মি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় দখল করে রেখেছে। সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো নিযন্ত্রণ নেই। এখন আমাদের দুপক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। এখন মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমরা সীমান্ত নিয়ে কোনো বৈঠকে বসতে পারছি না। আবার আরাকান আর্মি কোনো স্বীকৃতি পায়নি। ফলে দুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সীমান্ত এলাকা শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের সীমান্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।”
সীমান্ত এলাকায় অপহরণ ও মাদক চক্র সক্রিয় আছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় অপহরণ চক্রের পাশাপাশি কয়েকটি মাদক চক্র সক্রিয় আছে। শুধু এক বদি ধরা পড়েছে। তবে বদি চক্রের অনেক সদস্য এখনো সক্রিয় রয়েছে৷ আমরা সবাইকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছি।”