
অনলাইন ডেস্কঃ
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) বিলোপ, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করাসহ ৪১টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের তদন্ত দল। গতকাল বুধবার দুুপুরে জেনেভায় জাতিসংঘে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে পাঁচটি খাত নিয়ে ৪১টি সুপারিশ রয়েছে।
জাতিসংঘের তদন্ত দল বলেছে, তাদের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়া অনেকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গুরুতর আহত।
তারা জোর দিয়ে বলেছেন, দেশের প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য এবং বাংলাদেশের সব নাগরিকের স্বাধীনতা, সমতা এবং ন্যায্য সুযোগের জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহতা এবং সমস্যার গভীর কারণ নির্মূলের জন্য প্রতিবাদমুখর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সংস্কার, যাতে এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের শিকার, যা শুধু ২০২৪-এর সহিংসতার কারণে ঘটেনি; বরং দীর্ঘ দিন ধরে চলা রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ঘটেছে। এসব ক্ষোভ প্রশমনে দুঃখ-কষ্টগুলো শোনা দরকার।
দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে এসব সমস্যা সমাধানে ন্যায়সংগত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশপাশি নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত দল। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, ‘নিপীড়নমূলক আইনগুলো বাতিল এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে সাজান, যাতে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির নিরসন ও ভিন্নমতগুলো প্রকাশ করা যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করুন।
রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবাধ ও প্রকৃত নির্বাচনের জন্য একটি নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করুন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ বিশেষত নির্বাচনের আগের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন।’
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এ চর্চা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং ভোটারদের একটি বড় অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।’
অর্থনৈতিক সুশাসন প্রসঙ্গে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান আইন প্রয়োগ করে ঋণ আত্মসাৎ এবং অন্যান্য বৃহৎ পরিসরের দুর্নীতি স্কিম থেকে অর্জিত সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করতে জরুরি ব্যবস্থা নিন।
’
অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ যা বিদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনা এবং দুর্নীতিবিরোধী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
জবাবদিহি এবং বিচার বিভাগ খাত প্রসঙ্গে সুপারিশগুলোতে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অন্যান্য অপব্যবহার, জোরপূর্বক গুম এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার তদন্ত ও বিচারের জন্য কার্যকর, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সমন্বিত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করুন, যার মধ্যে ২০২৪ সালের কোটা বিক্ষোভের পূর্ববর্তী মামলা এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলো রয়েছে। যেসব অপরাধী নির্দেশদাতা ও নেতৃত্বদানকারীদের হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তাদের বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে জবাবদিহি নিশ্চিত করুন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রতিকার এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুন।
সুপারিশে অবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি আদেশ ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ নথি এবং ফরেনসিক প্রমাণসহ প্রাসঙ্গিক প্রমাণগুলো সংকলন ও সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। প্রমাণগুলো ধ্বংস বা লুকানোর চেষ্টা করেছেন—এমন কর্মকর্তা ও অন্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এবং ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাক্ষী সুরক্ষার বিষয়ে দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা আইন প্রণয়ন এবং জরুরি ভিত্তিতে ভিকটিম এবং সাক্ষী সুরক্ষা প্রগ্রাম চালু করতে সুপারিশ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর নিরাপত্তা বাহিনীর স্বাধীনতা সুরক্ষা এবং সাক্ষীদের ভয় দেখানো প্রতিরোধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও ফৌজদারি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৩২ ধারা এবং অন্যান্য অনুরূপ আইনে যে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা রহিতকরণ সাপেক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের তদন্ত এবং বিচারের জন্য অনুমতি দিতেও সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর।
বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক অপরাধগুলো যাতে নিয়মিত আদালতে বিচারে যায়, তা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো সংস্কার করতে বলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর। সামরিক সদস্যদের বা সামরিক এখতিয়ারের অধীন অন্য কোনো কর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর বাংলাদেশকে বলেছে, ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগে অভিযুক্ত নির্দেশদাতা এবং নেতৃত্ব পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করুন। যে অপরাধগুলোর তদন্ত ঝুলে আছে, সেগুলোর সম্পূর্ণ, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করুন এবং বিচারের আওতায় আনুন।’
ক্রান্তিকালীন বিচার মডেল গড়ে তুলতে দেশব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, পর্যাপ্ত বরাদ্দ, চিকিৎসা ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ারও পরামর্শ রয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সততা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং যোগ্যতাসহ পেশাদার পূর্ণকালীন কর্মীদের দিয়ে একটি স্বাধীন পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছে। ওই সার্ভিসের কর্মীদের জন্য রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা বা কোনো ধরনের পক্ষপাত ছাড়াই লোকবল নিয়োগ ও সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
আইনে এবং প্রয়োগিক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। বিচারকদের জন্য পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক এবং চাকরির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের মতো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার, অনুসন্ধান, জব্দ ও নজরদারির কাজগুলো পরিচালনার মতো আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রমের জন্য বিচার বিভাগকে উপযুক্ত বাজেট এবং প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘ বাংলাদেশকে বলেছে, ‘বিচার বিভাগে সরকার বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানিক উপায়ে এর সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডসহ সব ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিধান স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুমসংক্রান্ত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলো প্রকাশ এবং এ সংক্রান্ত সুপারিশ ও ফলাফলগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা জন্য জাতীয় কমিশনকে সহায়তা এবং পর্যাপ্ত রিসোর্স সরবরাহ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ বাংলাদেশকে বলেছে, ‘গোয়েন্দা, আধাসামরিক, পুলিশ বা সামরিক বাহিনী পরিচালিত আটকের সব গোপন স্থান সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ এবং সেই স্থানগুলো বন্ধ করুন। এই ধরনের জায়গায় সংঘটিত বলপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং অন্যান্য অপরাধের চিহ্নিত অপরাধীদের তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনুন।’
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সম্পর্কিত বিচারিক প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ বিচারের উদ্বেগ এবং মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে বিদ্যমান যে বিধান, তা রহিত করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশের পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগ সম্পর্কে জাতিসংঘ বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়মাবলি এবং মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানগুলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন। এ সংশোধনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলপ্রয়োগসহ জনসমাগম ছত্রভঙ্গ করার জন্য ধাতব গুলি বা অন্যান্য প্রাণঘাতী গোলাবারুদ ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশনা, যা আসন্ন মৃত্যু বা গুরুতর হুমকির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেবে।
জাতিসংঘ অবিলম্বে জনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর শটগানের জন্য ধাতব গোলাবারুদ না দেওয়ার সুপারিশ করেছে। গণগ্রেপ্তারের অনুশীলন বন্ধ করার জন্য পুলিশকে বাধ্যতামূলক আদেশ জারি ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে। নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নেরও সুপারিশ রয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর পুলিশের জন্য আইন বা অধ্যাদেশগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম এবং মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ওপর জোর দিয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, এটি পুলিশে দুর্নীতির মূলোৎপাটন, গুরুতর অসদাচরণের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং ধীরে ধীরে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
ন্যায্য স্বচ্ছ এবং যোগ্যতাভিত্তিক পুলিশ নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি এবং অপসারণ প্রক্রিয়া চালু করতে নাগরিকসমাজসহ সরকার, বিরোধী দল এবং স্বাধীন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ বাংলাদেশকে বলেছে, ‘র্যাব বিলোপ করুন এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত নয়—এমন কর্মীদের নিজ নিজ ইউনিটে ফিরিয়ে দিন।’
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলোপ করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের (বিজিবি) কাজগুলোকে সীমানা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা এবং ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করুন এবং সেই অনুযায়ী তাদের সংস্থান এবং আইনি ক্ষমতা নিশ্চিত করুন। আনসার-ভিডিপির ওপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রোধ করুন এবং তাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহায়ক হিসেবে কাজে লাগান।’
জাতিসংঘ বলেছে, ‘কেবলমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শুধু সীমিত সময়ের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত করা যেতে পারে, এসংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাস করুন।’
প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে নিরাপত্তা বাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক ও নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে একটি ব্যাপকভিত্তিক স্বাধীন ও ন্যায্য যাচাই প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে পুলিশ, গোয়েন্দা, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি এবং সশস্ত্র বাহিনীর যেসব কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের পদ থেকে অপসারণ করুন।’
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিশনে নিয়োজিত কোনো বাংলাদেশিকর্মী যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, মানবিক বা শরণার্থী আইন লঙ্ঘন বা যৌন হয়রানি বা অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর এবং শক্তিশালী স্বাধীন মানবাধিকার যাচাইকরণ ব্যবস্থা গড়ার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে। এ ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত র্যাব, ডিজিএফআই, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা অথবা বিজিবি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যুক্ত সামরিক বা পুলিশ সদস্য এবং ২০২৪ সালের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে মনোনীত না করতে সরকারকে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর।
নাগরিক পরিসরসংক্রান্ত সুপারিশে জাতিসংঘ অপরাধের তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী এবং গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ বা নাগরিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধ দমনে ব্যবহার হতে পারে—এমন আইনি বিধিবিধানগুলো স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন দ্বারা সুরক্ষিত আচরণের ক্ষেত্রে সাংবাদিক, আইনজীবী, ট্রেড ইউনিয়নকর্মী, সুধীসমাজকর্মী এবং অন্য মানবাধিকার রক্ষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিচারাধীন ফৌজদারি মামলাগুলো প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ সমর্থক, সংখ্যালঘু নেতা, মানবাধিকারকর্মী এবং নাগরিক বা রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশকারী অন্যরা নির্বিচারে যেন গ্রেপ্তার, অপ্রমাণিত ফৌজদারি মামলা বা অন্যান্য ধরনের ভয়ভীতির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘প্রতিশোধমূলক সহিংসতার বিরুদ্ধে তাদের কার্যকর সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিন। এই ধরনের হামলাকারীদের ব্যাপারে তদন্ত ও বিচার করুন।’
নজরদারি বন্ধে অস্পষ্ট বিধিবিধানগুলো সংশোধন এবং ইন্টারনেট বন্ধের ব্যবস্থা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। নাগরিক সমাজ সংগঠণগুলো বড় ধরনের বাধা-নিষেধ ছাড়া তহবিল সংগ্রহ ও পরিচালনা করতে পারে সে জন্য বিদেশি অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৬ সংশোধন করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।