
অনলাইন ডেস্কঃ
১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এক মাসের বেশি সময় সচিবশূন্য। কিছু জায়গায় দুই মাসের অধিককাল সচিব নেই। দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু জায়গায় অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব কর্মকর্তা ধরি মাছ না ছুঁই পানি— এমন ঢিমেতালভাবে কাজ করছে। ফলে সামগ্রিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সচিব না থাকায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয় নতুন দৃষ্টিভঙ্গির কোনো কাজ হচ্ছে না। কেবল রুটিন কাজ চলছে। অর্থাৎ চিঠি-পত্র আদান প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যক্রম।
যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে সচিব নেই সেগুলো হচ্ছে— পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়। এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসানের চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার জনস্বার্থে তাদের অবসরে পাঠায়।
জিইডিতে সর্বশেষ সদস্য (সচিব) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক মো. কাউসার আহম্মেদ। গত ২৮ ডিসেম্বর তার চুক্তি বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই ওই পদটি খালি। এখানে কাউকে রুটিন দায়িত্বও দেওয়া হয়নি। ফলে বিভাগটির কর্মকর্তারা দ্বিধাগ্রস্ত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার যে টাস্কফোর্স রিপোর্ট প্রণয়ন করেছে, সেটির সদস্য সচিব ছিলেন জিইডির সদস্য। এখন টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো নিয়ে আরও যেসব কাজ করা দরকার, সে বিষয়ে মূলত সাচিবিক কাজ করবে জিইডি। কিন্তু সদস্যের পদ খালি থাকায় এ কাজে কে নেতৃত্ব দেবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
আইএমইডিতে সচিবের পদ খালি প্রায় দুই মাস ধরে। সেখানেও কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে সচিব নেই। সেখানে বর্তমানে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রধান কাজগুলো সম্পন্ন হয় এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। কিন্তু সচিব না থাকায় কাজকর্ম শৃঙ্খলাহীন।
একই অবস্থা বিরাজ করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে এই মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মন্ত্রণালয়টিতে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন তোফাজ্জেল হোসেন নামের একজন কর্মকর্তা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে রুটিন দায়িত্বে রয়েছেন মফিদুর রহমান নামের একজন কর্মকর্তা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও বেশকিছু দিন ধরে সচিবের পদ খালি। সেখানে রুটিন দায়িত্বে রয়েছেন রাশিদা ফেরদৌস।
গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর অন্যতম সেতু বিভাগে বর্তমানে অতিরিত্ব দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহসানুল হক। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন মইনুল হক আনসারী আর সংসদ সচিবালয়ে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব সিদ্দিকুর রহমান। সকল ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রায় উদ্যোগহীন।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পূর্বের সরকারের পদায়ন করা কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই কার্যক্রম শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। ধীরে ধীরে বিভিন্ন পদে আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের পদায়ন করা শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তারা গোপনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
এরই ধারাবাহিকতায় অনেককে ওএসডি করা হয়। এর ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যেও শঙ্কা বিরাজ করছে। অনেকে যে কোনো সময় ওএসডি ও বহিষ্কারের আতঙ্কে রয়েছেন। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারও নির্ভরযোগ্য কর্মকর্তা পাচ্ছেন না। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকা সত্ত্বেও অনেক পদে সচিব পদায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
শূন্য পদগুলোতে সচিবদের পদায়নে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ দেশ রুপান্তর