
বিশেষ প্রতিনিধি, খুলনা থেকে ফিরে:
খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, অথচ তিনি দলে মুলধারার রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়। দলে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসাবে খুলনাতে তার কোন ভূমিকা নেই। নগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু যে কোন কারনে দল থেকে অব্যহতি পেয়েছেন, কিন্তু তিনি তো বিএনপিতেই আছেন, তার মানে তো এই না, তিনি প্যারালাল বিএনপি করবেন।
দলের গঠনতন্ত্র আছে, একটা নিয়ম আছে, যা সারা দেশেই প্রযোজ্য। মঞ্জুর সমর্থনে যারা আছেন, তাদের তো দলের কার্যক্রমে অংশ নিতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু তারা কেন মিছিল- সমাবেশ করেন না- করছেন না? দল তো তাদের সবাইকে অব্যাহতি দেয় নি, বা তাদেরকে বিএনপির মুলধারা থেকে বের করে দেয় নি? মঞ্জু ও তার সমর্থকরা যা করছেন, এমন নজির কি দেশে কোথাও আছে? মঞ্জুর সমর্থক নেতা-কর্মীদের কাছে বিনয়ী প্রশ্ন, তারা কি জিয়া- খালেদা জিয়া- তারেক রহমানের বিএনপি করেন, না মঞ্জুর বিএনপি করেন?
মঞ্জু- মনিকে নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার মঞ্জু সভাপতি, মনি সাধারণ সম্পাদক কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম। খুলনার পশ্চিম বানিয়াখামারে নিজ বাসভবনে অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক যুবনেতা ফখরুল এসব কথা বলেন।
ফখরুল আলম। ৯০ এর এরশাদ বিরোধী রাজপথের আন্দোলনে পুরা সময়টাই রাজপথে ছিলেন। শেখ হাসিনার পতনেও রাজপিথে ছিলেন। প্রায় ৪৫ বছরের এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী ফখরুল।
৮০র দশকে এরশাদ জামানায় নতুন করে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সংগঠক ফখরুল। খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক। সেই সময়ে সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে পরিচালনা কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরশাদ জামানায় মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী প্রয়াত কাজি সেকেন্দার আলি ডালিমের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
রুপসা ব্রিজসহ খুলনা উন্নয়ন ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে যুব সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে আমরণ অনশনে ফখরুল ফ্রন্ট লাইনের একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
পরে যুবদল খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ছিলেন। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। মঞ্জু- মনির নেতৃত্বাধীন বিএনপির খুলনা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দায়িত্ব পালন জরেছেন। সর্বশেষ, মনা- তুহিনের নেতৃত্বে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে হামলা- মামলার শিকার হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে হাফ ডজনের উপরে মামলা হয়েছে ফখরুলের নামে। দফায় দফায় জেল খেটেছেন। পুলিশের নির্যাতনে একটি চোখ পর্যন্ত হারিয়েছেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে খুলনা পিকচার প্যালেস মোড় থেকে প্রকাশ্যে গ্রেফতারও হয়েছিলেন ফখরুল।
২৪ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ফখরুল এবার সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। আপন ছোট ভাই শফিকুল আলম তুহিন সাধারণ সম্পাদকে প্রার্থী হওয়ায় ফখরুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেন। পরে তুহিন সাধারণ সম্পাদক হন। জনশ্রুতি আছে, মনা- তুহিন কমিটিতে আসন্ন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ফখরুল এবার সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রার্থী। তবে এ ব্যাপারে ফখরুল মুখ ফুটে নিজ থেকে কিছু বলেন নি।
আলাপকালে এক সন্তানের জনক, এক সময়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফখরুল বলেন, মঞ্জু- মনি প্যারালাল বিএনপি করে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। জাতীয় পার্টি থেকে আসা মনিকে দল খুলনা মেয়রে মনোনয়ন দিয়েছেন। দল তাকে অনেক সম্মান দিয়েছে। নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে তাকে মেয়ের নির্বাচন করেছে। অথচ তিনি কোন নেতা কর্মীর জন্য বা বিএনপির কারো জন্য কিছুই করেননি। তারপরেও তিনি দলের সাথে বেইমানি করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি ভিন্ন অবস্থা নিয়েছেন। তিনি খুলনা বিএনপিতে মূলধনের সাথে সক্রিয় নন। অথচ তিনি কেন্দ্রে গিয়ে বিএনপি পরিচয় বহন করেন। এটা এক ধরনের অসততা, অনৈতিক।
তিনি বলেন, মঞ্জু- মনি দুজনাই দলের গঠনতন্ত্র না মেনে অনৈক্য সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। না খুলনা, না কেন্দ্র কেউই তাদের কথা শুনে নি। বাস্তবতা বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারনে মঞ্জু- মনি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন। দু:খ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, এরশাদ জামানায় মৃত প্রায় ছাত্রদলকে আমরা ১৫:থেকে ১৬ জন পুনর্গঠন করেছি। আমরাই মঞ্জুকে মঞ্জু বানিয়েছি। সাবেক ডেপুটি মেয়র মোক্তারের বাড়িকে কেন্দ্র করে ৮০র দশকে মঞ্জু গ্রেফতার হলে সকাল- বিকাল মিছিল করে মঞ্জুকে ছাড়িয়ে এনেছি। মঞ্জু তখন নেতা হিসাবে ক্রমেই প্রতিষ্ঠিত হয়। জনপ্রিয় হয়। যার ধারাবাহিকতায় আজকের মঞ্জু। কিন্তু তার মানে তো এই না, মঞ্জু দলের চেয়ারম্যান- ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে চ্যালেঞ্জ করবেন, প্যারালাল বিএনপি করবেন। বেগম জিয়া- তারেক রহমান বা বিএনপির কারনেই আমরা হিরো, নতুনা আমাদের কি আর কোন রাজনৈতিক পরিচয় আছে? তিনি যদি ভিন্ন পরিচয় বহন করতে চস্ন, কিংবা নিজেকে বেগম জিয়া বা তারেক রহমানের সমকক্ষ মনে করেন, তাহলে পৃথক রাজনৈতিক দল গঠন করুক যেমন অতীতে করেছেন বি চৌধুরী, কর্নেল অলি বা ওবায়দুর রহমানরা। বিএনপিতে থেকে দলের মধ্যে ভিন্ন অবস্থান নেবেন, এটা কেমন কথা- প্রশ্ন ফখরুলের।
মনা- তুহিনের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে তিনি সিনিয়র সহসভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক ও তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক সম্মেলনে নির্বাচিত হয়েছেন, এখন বাকি কমিটি নেতারা মিলে ঠিক করবেন। খুলনা বিএনপির স্থানীয় অভিভাবক বকুল- হেলাল- পাপুল আছেন। বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করছেন আমানুল্লাহ আমান। তারা নিশ্চয়ই দলের ভালোর জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন। নেতা-কর্মীদের পালস বুঝবেন। সেখানে তারা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, তাহলে দায়িত্বে দেবেন। সবশেষে ফখরুল বলেন, দায়িত্ব পেলেও আছি, না পেলেও আছি। আমি বিএনপিতে ছিলাম, আছি, থাকবো।