
বিশেষ প্রতিনিধি:
মেয়র নির্বাচন করবো এটা এখনও চুড়ান্ত কিছু হয় নি। রাজনীতি করি, দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। মেয়র নির্বাচনের সময় আসুক। শিডিউল ঘোষনা হোক,। তখন দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। তবে মেয়র নির্বাচন করার ব্যাপারে আমার প্রতি জনগনের চাপ আছে, অনুরোধ আছে। প্রত্যাশা আছে। ভালবার আছে। দল মনোনয়ন দিলে, তখন বলা যাবে আমি প্রার্থী। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করলে আর কপালে লেখা থাকলে খুলনা সিটির মেয়র হওয়া সম্ভব।
অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে খুলনা মহানগর বিএনপির নব নির্বাচিত সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা এসব কথা বলেন। নগরীর মুন্সিপাড়ায় নিজ আসভবনে আলাপকালে তিনি সমসাময়িক বিষয়সহ অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলনে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে এডভোকেট শফিকুল আলম মনা সভাপতি, শফিকুল আলম তুহিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই দিনে তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক হন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে মনা বলেন, সবে সম্মেলন শেষ হয়েছে। সিয়াম সাধনা ও সংযমের মাস রোজা চলছে। ঈদের পরেই সদ্য সমাপ্ত সম্মেলনে গঠিত বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। তিনি জানান, অতীতে আন্দোলন- সংগ্রামে ছিলেন, দলের সুখে দুখে ছিলেন এমন নেতা- কর্মীদেরকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তাদেরকে নিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।
এডভোকেট শফিকুল আলম মনা পেশায় আইনজীবী হলেও এখন ফুল টাইম রাজনীতিবিদ। দিনের পনেরো থেকে ১৬ ঘণ্টা দলের জন্য কাজ করেন। দলের জন্য নিবেদিত প্রান। স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। দুই সন্তান আমেরিকায়, আরেক সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত, সেই প্রেক্ষাপটে একজন সফল পিতা, সফল অভিভাবক। স্বাধীনতা পরবর্তী বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। বিএল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সম্পাদক মন্ডলিতে বিজয়ীও হয়েছিলেন। কর্মীবান্ধব ও মিডিয়া বান্ধব একই সাথে প্রচন্ড পরিশ্রমী মনা দীর্ঘ পাচ দশকেরও বেশি সময় ধরে খুলনা বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির লং জার্নিতে মনা এক জীবন্ত কিংবদন্তী। খুলনার রাজনীতির নানা উথান পতনে মনা ফ্রন্ট লাইনের একজন অক্লান্ত যোদ্ধা।
৭৫ এর পরে জেনারেল জিয়ার হাত ধরে যুবদলে যোগ দেন মনা। এর পরে আর পেছনে তাকাতে হয় নি। গত পাচ দশকে যুবদল- বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন মনা। জেলার রাজনীতি করে এসেছেন সব সময়েই। বর্ণাঢ্য অতীত রাজনৈতিক জীবন তার।
২০২১ সালের ৯ নভেম্বরে সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথমবারের মতো খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক হন। জেলার রাজনীতি থেকে মহানগর রাজনীতিতে পা দেন। নগরীর ৩১ টি ওয়ার্ড, পাচটি থানা কমিটি, দুটি ইউনিয়ন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে নানা ষড়যন্ত্রকে মোজাবলা করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সফল সম্মেলনে মনা এখন নির্বাচিত সভাপতি। একজন সফল টিম ক্যাপ্টেন।
মহানগর রাজনীতিতে পা দেবার পর থেকে খুলনা সিটি মেয়র প্রার্থী হিসাবে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তিন তিনবারের সাবেক কাউন্সিলর চির তরুন মনা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসাবে আলোচনায়। সামাজিক- সদালাপী- বিনয়ী আচরণের কারনে মনা খুলনার সব মহলেই সমাদৃত। রাজনীতির পাশাপাশি খুলনা শিশু হাসপাতালসহ অন্যান্য সামাজিক- সাংস্কৃতিক অংগনে মনা সব সময়েই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
আলাপকালে মনা জানান, আগামীতে খুলনা ৬ টি আসনেই বিএনপি নির্বাচন করবে। বিজয়ী হওয়ার লক্ষে কাজ করবে। সাবেক এমপি আলি আসগর লবি খুলনা মহানগরে প্রার্থীতার ব্যাপারে মনা জানান, আমার জানামতে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। লবি বিএনপি করছেন, খুলনা সদর আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসাবে জনসংযোগ করছেন এমন পাল্টা প্রশ্নে মনা বলেন, তিনি বিএনপিতে আছেন, এমন তথ্য আমার জানা নেই। তিনি পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের পরে দলে ফিরে এসেছেন, এমন তথ্যও আমার কাছে নেই।
দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেমন হতে পারে- এমন প্রশ্নে মনা জানান, অতীতে যারা দলে ছিলেন, দলের কর্মসূচিতে ছিলেন, আন্দোলন- সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন তারাই কমিটিতে প্রাধান্য পাবেন. নতুন কমিটিরে প্রত্যেকের অতীত বিবেচনা করে মূল্যায়ন করা হবে। দলের ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন করা হবে।
আসন্ন নগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কে হচ্ছেন সিনিয়র সহসভাপতি- সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমন প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মনা বলেন, রোজা- ঈদ যাক, আমরা নিজেরা বসি। দুই কেন্দ্রীয় নেতা বকুল- হেলালকে ইঙ্গিত দিয়ে মনা বলেন, দলের স্থানীয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা আছেন। সবার সিদ্ধান্তে যেটা ভালো হয়, যাকে করলে ভালো হয়, সেটিই করা হবে।
দলের সাবেক মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দল তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। তার ব্যাপারে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে খুলনার কোন দায়িত্ব বা ভুমিকা নেই। মঞ্জু গ্রুপ বা তার অনুসারী লোকজনকে মহানগর কমিটিতে নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে মনা জানান খুলনা বিএনপিতে এই গ্রুপ, সেই গ্রুপ বলে কিছু নেই।
মনা জানান, দল একটা নিয়মে চলে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক চলে। নিয়ম- গঠনতন্ত্র মেনে যারা বেগম জিয়া- তারেক রহমানকে নেতা মেনে দলে সক্রিয় আছেন, আন্দোলন- সংগ্রাম করেছেন, দলের প্রতি অনুগত আছেন, তাদেরকে মুল্যায়ন করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে নেতা- কর্মীদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে।
খুলনার রাজনীতিতে জামাতের সাথে কোন বিশেষ সম্পর্ক বা বিরোধ নেই জানান মনা। তিনি বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপি- জামাত যেমন সম্পর্ক খুলনাতেও তাই। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথেও কোন দুরত্ব নেই। কুয়েট ঘটনা নিয়ে বিএনপির সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুরত্ব প্রসঙ্গে মনা জানান, ওটা নিয়ে ছাত্রদলের সাথে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো যা সেদিনই মীমাংসা হয়ে গেছে।