
অনলাইন ডেস্কঃ
কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের হ্যাচারিতে জন্ম নেওয়া ৬৬৯টি সামুদ্রিক কচ্ছপ ছানা বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে দ্বীপের মেরিন পার্ক হ্যাচারিসংলগ্ন পশ্চিম সৈকতে বাচ্চাগুলো সাগরে ছাড়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চলতি মৌসুমে প্রথম সেন্ট মার্টিন দ্বীপের হ্যাচারিতে কচ্ছপের ১১১টি বাচ্চা ফুটে। এরপর এসব অলিভ রিডলি প্রজাতির কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই হ্যাচারি থেকে ১ মার্চ ১৬৭টি, ২ মার্চ ৩৭, ৪ মার্চ ১৭১ এবং ৬ মার্চ ১৮৩টি কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে ফিরেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ‘আমার সেন্ট মার্টিন’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন হ্যাচারিটি পরিচালনা করছে। সংগঠনটির সমন্বয়ক আলী হায়দার জানান, চলতি বছর সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিভিন্ন স্থান থেকে আট শতাধিক কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করেছে তাদের সদস্যরা। এসব ডিম তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের মেরিন পার্ক হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করেন। সেখানেই ডিম ফুটে বাচ্চা হয়েছে।
সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য কয়েক বছর ধরে সেন্ট মার্টিন সৈকত থেকে কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করছে সংগঠনটি। সমন্বয়ক আলী হায়দার বলেন, সেন্ট মার্টিনে জীববৈচিত্র্য, সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য নিরাপদ প্রজনন ও আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাঁরা কাজ করছেন।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে পাঁচ প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের বিচরণ রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার উপকূলে তিন প্রজাতির কচ্ছপ দেখা যায়। সম্প্রতি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক কচ্ছপ ছাড়া গত পাঁচ বছরে হক্সবিল বা ভূত কচ্ছপ এবং গ্রিন টার্টল বা সবুজ রঙা কচ্ছপের দেখা মিলছে না।
কক্সবাজারের সোনাদিয়া থেকে সেন্ট মার্টিন সমুদ্র উপকূলের সৈকতের বালিয়াড়ি অলিভ রিডলি কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্র। প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চ) এ প্রজাতির কচ্ছপ দল বেঁধে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসে। কিন্তু দুই দশক ধরে এদের প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস এবং আসার পথে নানা বাধায় প্রতিবছর মারা পড়ছে স্ত্রী কচ্ছপ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, ‘অপরিকল্পিত পর্যটন ও স্থাপনা, বনায়ন, কুকুর-শিয়ালের আক্রমণ, বালিয়াড়ি ধ্বংস, সমুদ্রতীরে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহারসহ মানুষের নানা অসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে কচ্ছপের নিরাপদ ডিম পাড়ার স্থান বিনষ্ট ও হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। তা ছাড়া সাগরে জেলেদের ফেলা বিভিন্ন ধরনের জাল এবং পরিত্যক্ত জালের কারণে প্রজননক্ষেত্র অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। অলিভ রিডলিকে প্রাকৃতিক কারণেই নিজ জন্মভূমিতে ডিম পাড়তে আসতে হয় বলেই সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই উপকূলে এসে ডিম পাড়ে।’